শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১১

বড় মামার সাথে এক বৌভাতে

বড় মামার সাথে এক বৌভাতে

দুধ-ভাত খাওয়ার লোভে মিলন মামার বাড়ি কখন গিয়েছিল বলে আমার জানা নেই। তবে মিলন মামার বাড়ি প্রায়ই যায়। কারণ মামাতো বোন প্রিউকে তার খুব ভালো লাগে। তার সাথে আড্ডা দেওয়ার লোভেই মামার বাড়িতে ঘনঘন যাওয়া।কিন্তু বড় মামাকে তার মোটেও ভালো লাগে না। বড়মামা যে খুব রাগী তা কিন্তু নয়। বরং শান্তশিষ্ট স্বভাবের একজন মানুষ। তবে মামা একটু কানে খাটো। তার উপরে বেশি কথা বলেন। একবার কথা বলতে শুরু করলে আর থামাতে চান না তার কথার এক্সপ্রেস। তার এই কানে খাটো আর বেশি কথা বলার স্বভাবের কারণে মিলনের কাছে তাকে একটা জলজ্যান্ত আতংকই মনে হয়। মামার এই গুণগুলোর কারণে তাকে প্রায়স পড়তে হয় নানা রকম সমস্যায়। যেমনটা পড়েছিল তার এক বন্ধুর ছেলের বৌভাতে। ঘটনাটা খুলে বলি।
সেদিন মিলন মামার সাথে সেই বৌভাতে গিয়েছে। তার অবশ্য যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। শুধুমাত্র প্রিউ সঙ্গে যাবে বলে রাজী হয়েছে। মামা বৌভাতের অনুষ্ঠানে গিয়ে শুরু করলেন তার কথার এক্সপ্রেস। এইবার তার কথার শিকার হলেন নতুন বৌ। নতুন বৌকে বলতে শুরু করলেন,আমি হলাম তোমার শ্বশুরের একজন ঘনিষ্ট বন্ধু। আমার নাম আবু হাসনাত। তুমি আমাকে হাসনাত কাকা বলেই ডেকো। তোমার শ্বশুর ছিল আমার নেংটা কালের বন্ধু। আর বলো না.. ..চলছে মামার কথার এক্সপ্রেস।
নতুন বৌ আর কি করবে। এমনেতেই নতুন বৌ। তাই মামাকে কিছু বলতেও পাচ্ছে না আবার সেখান থেকে সরেও আসতে পারছে না। মূখ কালো করে মামার কথা হজম করে যাচ্ছে। মিলনের তো বরাবরই মামার কথার এক্সপ্রেস ভালো লাগে না। তার উপরে ক্ষুধায় পেটে ইঁদুর ড্রাম পিটাছে। তাই মামাকে এক রকম টেনে হিসরে সোজা নিয়ে এলো খাবার টেবিলে। তিনজন পাশাপাশি চেয়ারে বসে তৃপ্তি করে খেল। মামা খাওয়া শেষে ঢেকুর তুলতে তুলতে বললেন,বেশ ভালো খেলাম,কি বলেছিস? মামা মিলনদের উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে বললেন,তোরা একটু বস। আমি আমার বন্ধুর সাথে দেখা করে আসি। কখন এসেছি। বৌ মার সাথে কত কথা বললাম। এদিকে তোদের জোরাজুরিতে খেয়েও ফেলাম। এখন যদি বন্ধুর সাথে দেখা না করি তাহলে বন্ধুটি অনেক রাগ করবে। তোরা এখানেই থাকিস। আমি যাবো আর আসবো।মামা হনহন করে তার বন্ধু খুঁজে চলে গেলেন।
মামায় চলে যাওয়ায় মিলন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। সে যে প্রিউকে ভালবাসি সে কথা কখনও প্রিউকে বলা হয়নি। তাকে দেখার জন্যই ঘনঘন তাদের বাসায় যায় তা আজ মিলনকে বলতেই হবে। মিলন সাহস করে প্রিউকে কথাটা বলে ফেলে। প্রিউ কথাটা শুনে বলল,মিলন ভাই, আমি জানি তুমি আমাকে ভালবাসো।। মেয়েরা অনেক কিছু আগেবাগেই বুঝতে পারে। তারপর মিলনের ডান হাতের উপর ওর ডান হাত রেখে বলল,আমাকে কষ্ট দিবে নাতো?
মিলন আর জবাব দিতে পারল না। সে মামাকে দেখল হন্তদন্ত হয়ে এদিকে আসতে। মিলন হাতটা সরিয়ে নেয়। মামা এসে বললেন,সর্বনাশ হয়েছে! আরে এটা তো আমার বন্ধুর ছেলের বৌভাত না।
মিলন আর প্রিউ অবাক হয়ে মামার দিকে তাকায়। বলল,মানে?
আরে আমার বন্ধুর ছেলের বৌভাত হচ্ছে জোঁনাকি কমিনিউটি সেন্টারে। আর আমি শুনেছি সোনালী কমিনিউটি সেন্টার।তাই ভুল করে এখানে চলে এসেছি। বুঝলি, এয়ার ফোন না কিনলেই নয়। সত্যিই উল্টাপাল্টা সব শুনছি।
কথাটা শুনে মিলন হেসে উঠে। প্রিউও হাসে। প্রিউর এমন প্রাণখোলা হাসি অনেকদিন দেখা হয়নি মিলনের। তার খুব ভালো লাগে।

ইন্দ্রজিৎ ইমন
চাষাড়া,নারায়ণগঞ্জ - ১৪০০

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thanks.