একজন সাহসী বন্ধু
ইন্দ্রজিৎ ইমন
আমার বন্ধু মাহির। খুব ঘনিষ্ঠ যে কয়জন বন্ধু আছে আমার মাহির তাদের মধ্যে
একজন। খুব সাহসী। তার সাহসীকতার দুই একটা নমুনা আমরা বন্ধুরা বাস্তব জীবনে
না দেখলেও তাকে আমরা সবাই সাহসী হিসাবেই চিনি। কারণ মাহিরের নিজের মুখে বলা
সব গল্পতেই তার সাহসীকতার বিস্তর প্রমাণ পাওয়া যায়। তার উপরে তার আবার
পালয়ানদের মতো শরীর। সকাল বিকাল দুই বেলা ডজন খানেক দেশী মুরগীর ডিম খায়।
তাই আমরা বন্ধ...ুরা কোন বিপদের আশংকা দেখলেই তাকে সাথে রাখি। তার সাহসীকতায় আমরাও সাহসী হই।
কিছুদিন আগে আমি ভালবেসে ফেলি পাশের পাড়ার রিয়া নামের এক মেয়েকে। কিন্তু ঐ
পাড়ার ছেলেদের সাথে আমাদের সম্পর্ক দা-কুমড়া। গত বছর ফুটবল খেলা নিয়ে
মারামারি হওয়ার পর থেকে এই অবস্থা। তাই অনেক ইচ্ছা থাকার স্বত্বেও রিয়ার
সাথে দেখা করতে ওদের পাড়ায় যেতে ভরসা পাই না। মাহির আমাকে সাহস দেয়।
বলে,‘দোস্ত , মে হু না! আমি থাকতে তোর কোন ভয় নাই। চল হবু ভাবির সাথে দেখা
করে আসি।’ আমি মাহিরের কথায় মনে বল পাই। তার উপরে রিয়াকে দেখার লোভ । তাই
সাত-পাঁচ না ভেবে মহানন্দে মাহিরের প্রস্তাবে রাজী হই।
আমি ভয়ে ভয়ে
রিয়াদের পাড়ায় ঢুকি। মাহিরকে দেখে নির্ভয় মনে হয়।মনে হলো ভয় কি জিনিস মাহির
তা জানেই না। এদিকে হাঁটতে হাঁটতে রিয়াদের বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছি। আমি
ওদের পাড়ার বেশ কিছু ছেলেকে আমাদের দিকে আসতে দেখি। ওদের দেখেই আমার গলা
শুকিয়ে যায়। তবে মনে ভয়কে প্রশ্রয় দেই না। কারণ আমার পাশে মাহির আছে। আমি
নির্ভয়ে মাহিরের দিকে তাকাই। কিন্তু একি! মাহির কোথায়!!! পেছন থেকে মাহির
কখন যে পালিয়ে গেছে টেরই পাই নি!
৩ দিন পর। আমি মাথায় ও হাতে ব্যান্ডেস
নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। মাহিরকে দেখি হেলেদুলে আসতে।
আমি হাতের কাছে তাকে পেয়ে কলার চেপে ধরে বললাম,‘ শালা,তুই না খুব সাহসী।
তাহলে সেদিন এই ভাবে আমাকে বিপদের মধ্যে ফেলে পালিয়ে এলি কেন?’
মাহির
আমার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলল,‘ আসলে সেদিনের দিবসটার কারনে
শুধু ওরা বেঁচে গেল। নয়তো মারতাম ঐ পাড়ায়,লাশ পরত ... ”
‘থাম! আর চাপা মারিস না। তোর দৌড় কতটুকু দেখে ফেলেছি।আমি রাগে দাঁত কটমট করি।
মাহির বলল ‘ আরে সেদিন ছিল ১৬ ই নভেম্বর, বিশ্ব সহিষ্ণুতা দিবস। ওদের
উল্টা-পাল্টা কথা শুনে যদি আমার সহিষ্ণুতার বাঁধ ভেঙ্গে যায় এই ভয়ে সেদিন
সেখান থেকে পালিয়ে আসি,বুঝলি? আসলে দিবসটাকে সম্মান জানাতেই.. ..
আমি মাহিরকে থামিয়ে দিয়ে বললাম ,‘ ভাগ্যিস ঘটনাটি আজ ( ১৯ নভেম্বর) ঘটে নি। তাহলে তো আরো সর্বনাশ হতো!’
মাহির অবাক হয়ে বলল,‘মানে!’
আমি অবজ্ঞার সুরে বললাম,‘মানে আর কি? আজ যে বিশ্ব টয়লেট দিবস!’
indrajit.emon@yahoo.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thanks.