রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১১

ভালো ভূত

ভালো ভূত
ইন্দ্রজিৎ ইমন

রিমঝিম খুব লক্ষ্মী একটা মেয়ে। তার বয়স আট। সে কখনও স্কুলের পড়া ফাঁকি দেয় না। এমন কি স্কুলে যাব না- এ কথাটিও কখনও বলে না। তার স্কুলের শিক্ষকরা তাকে খুব ভালোবাসে। সকলের নয়নমণি। রিমঝিম খেলাধুলায়ও খুব পটু। সে প্রতিদিন বিকালে নিয়ম করে তার বন্ধুদের সাথে খেলা করে। তবে রিমঝিমের একটা বদঅভ্যাস আছে। সে প্রতিদিন রাতে পড়তে পড়তে পড়ার টেবিলে ঘুমিয়ে পড়ে। অনেক চেষ্টা করেও সে তার এই বদঅভ্যাস পরিবর্তন করতে ...পারেনি। পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমে তার দু’চোখের পাতা এক হয়ে যায় রিমঝিম তা বুঝতে পারে না। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ঘুমানোর আগে তার পড়ার বই-খাতাগুলো সে গুছিয়ে রাখতে পারে না। অগোছালো অবস্থায় পড়ে থাকে টেবিলে। আজও তার এমনটা হলো কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে রিমঝিম অবাক হয়। নিজেকে সে তার বিছানায় আবিষ্কার করেÑ তার গায়ে কাঁথা জড়ানো, মাথার ওপর মশারি, মশারিটাও পরিপাটি করে গুঁজে রাখা। এমন কি ঘরের বাতিও নিভানো।
সকালের সূর্যের মিষ্টি রোদ ঘেের ঢুকছে। রিমঝিম ঘুমের আমেজ কাটানোর জন্য বড় একটা হাই তোলে। তার চোখ চলে যায় পড়ার টেবিলের দিকে। চোখে বিস্ময়! তার চোখ থেকে ঘুম পালায়। সে দেখে তার পড়ার বই-খাতাগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা। কিন্তু সে জানে এর কোনটাই সে করেনি।
সকালে খাবার টেবিলে নাস্তা করতে করতে রিমঝিম তার মাকে এই বিষয়টা জানায়। মা সব শুনে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে, মা ,এটাই তো স্বাভাবিক। তুমি খুব লক্ষ্মী একটা মেয়ে। তাই তোমার হয়ে ভালো ভূত তোমার ওই কাজগুলো করে দেয়। সব কিছু গুছিয়ে রাখে। ভালো ভূতেরা লক্ষ্মী মেয়েদের এইভাবে সাহায্য করে আর দুষ্টু, পঁচা মেয়েদের ভয় দেখায়।
মার কথা শুনে রিমঝিমের খুব ভালো লাগে। সে তার মার কাছে জানতে চায় ভালো ভূত দেখতে কেমন? মা রিমঝিমকে জানায় ভালো ভূত দেখতে খুব সুন্দর। তার কাছে জাদুর কাঁঠি আছে!
সেদিন থেকে রিমঝিমের ভালো ভূতকে দেখার খুব শখ। কিন্তু রাত হলেই তার দু’চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসে। তাই পড়তে পড়তে পড়ার টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়ে। ফলে তার আর ভালো ভূতকে দেখা সম্ভব হয় না। একদিন সে ঠিক করে আজ সে ভালো ভূতকে দেখবেই দেখবে। তাই সে পুরো দুপুর ভালো করে ঘুমিয়ে কাটায় যেন রাতে তার দু’চোখ ঘুমে জড়িয়ে না আসে।
সন্ধ্যা হলো , হলো রাত। ধীরে ধীরে রাত গভীর হচ্ছে। রিমঝিম পড়ার টেবিলে মাথা দিয়ে ঘুমের ভান করে শুয়ে আছে। সময় যেন কাটে না। রিমঝিমের মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে সে এইভাবে শুয়ে আছে। কিন্তু ভালো ভূতের কোন দেখা নেই। হঠাৎ রিমঝিমের ঘরের দরজা ঠেলে নিঃশব্দে ঘরে ঢোকে ভালো ভূত। ভালো ভূত রিমঝিমকে কোলে করে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তার মশারি টাঙিয়ে ভালো করে গুঁজে দেয়। টেবিলের বই-খাতাগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে। তারপর ঘরের বাতি নিভিয়ে আবার নিঃশব্দে চলে যায়।
পরের দিন সকালে খাবার টেবিলে রিমঝিম। সে খুব উৎফুল্ল। মা এর কারণ জিজ্ঞেস করলে রিমঝিম তার মাকে বলে, মা, আমি গতকাল রাতে ভালো ভূতটাকে দেখেছি। রিমঝিম তার মাকে জড়িয়ে ধরে। মা তুমি খুব ভালো। তুমি খুব লক্ষ্মী।
রিমঝিমের মা রিমঝিমের কপালে আদর করে চুমো এঁকে দেয়।

1 টি মন্তব্য:

thanks.