সৈকত ও ভণ্ড জ্যোতিষী
ইন্দ্রজিত্ ইমন
বরাবরই ভাগ্য গণনার ব্যাপারে আমার প্রবল আগ্রহ দেখে আমার বন্ধু সৈকত বলল,
‘কি সবে যে বিশ্বাস করিস না তুই!’ আমি বললাম, ‘কেন জ্যোতিষীদের তুই বিশ্বাস
করিস না?’ সৈকত বলল, ‘তাহলে ঘটনা খুলেই বলি কেন আমি জ্যোতিষীদের বিশ্বাস
করি না।’ সৈকত বলতে শুরু করল, ‘জ্যোতিষীদের ব্যাপারে আমার এলার্জি ছিল আগে
থেকেই। তবুও গত কয়েক বছর আগে বছরের প্রথম দিনই এক জ্যোতিষীকে হাত দেখাই
কৌতূহলবশত...।
জ্যোতিষী আমার হাত দেখে বলে, আমার ভাগ্য খুব সুপ্রসন্ন। সৌভাগ্যের পায়রা
নাকি এ বছর আমার কাছে ধরা দেবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমার প্রেমের ভাগ্যও
বৃহস্পতিতে। এই বছর এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সুন্দরী মেয়ে আমার প্রেমে পড়বে।
আমি জ্যোতিষীকে ১০০ টাকার একটা নোট বখশিস দিলাম, এই খুশির সংবাদটি দেয়ার
জন্য। জ্যোতিষীর ওই একটি কথা আমার জীবনে আমূল পরিবর্তন আনে। সেদিনের পর
থেকে রাস্তাঘাটে যে কোনো সুন্দরী মেয়ে দেখলে আমার ভাব বেড়ে যায়। ভাবি এই
বুঝি সে মেয়েটার দেখা পেলাম, যে কিনা আমার প্রেমে হাবুডুবু খাবে। কিন্তু
হায়! জানুয়ারি যায়, যায় ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, জুনও। জুলাই রানিং।
অবশেষে সিদ্ধান্ত নেই আর অপেক্ষা নয়। এইবার নিজেই প্রপোজ করব। তাও কাজ হলো
না। অক্টোবর মাস চলছে। আমি যখন প্রায় প্রেমের আশা ছেড়ে দিয়েছি, সে সময় আমার
ছোট বোনের বান্ধবী সুবর্ণা আমাকে বলল, তার নাকি আমাকে খুব ভালো লাগে।
তারপর থেকে আমাদের শুরু হয় মোবাইলে টকিং আর জায়গায় অজায়গায় ডেটিং। দু’মাসের
প্রেমে আমি যখন মোবাইল বিল আর ফাস্টফুডের ধাক্কায় ঋণে জর্জরিত, তখন জানতে
পারি সুবর্ণা নাকি আমাকে ভালোই বাসেনি। সে আমারই আপন বোনের সঙ্গেই বাজি ধরে
আমার সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করেছে। এখন তুই বল ইমন, কোন ভরসায় আমি
জ্যোতিষীদের বিশ্বাস করব?’ আমি আর কি বলবো? কারণ এই বছর আমাকেও এক জ্যোতিষী
হাত দেখে বলেছে আমার প্রেমের ভাগ্য সুপ্রসন্ন। এই বছর আমার একটা প্রেম
হবেই হবে। না হলে তাকে ১০০টা জুতার বাড়ি দিয়ে আসতে বলেছে। আমার আগামী বছর
জ্যোতিষীটাকে জুতার বাড়ি দেয়ার ইচ্ছা নাই, তবে ৫০০ টাকার নোটটার জন্য বড়ই
আফসোস হচ্ছে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thanks.