বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১২

হায় পরিমল!

হায় পরিমল!
ইন্দ্রজিৎ ইমন

মধ্যবৃত্ত ঘরের সন্তান হওয়ায় পড়াশুনার পাশাপাশি আমাকে ছাত্রছাত্রী পড়াতে হতো। আজকের কথা নয়, সেই এসএসসি পাশ করার পর থেকেই। ছাত্র হিসাবে মোটামুটি মানের ছিলেও শিক্ষক হিসাবে আমার এলাকায় বেশ নাম ডাক ছিল। তার উপর বড় ভাই কলেজের প্রভাষক। তাই অনেক টিনেজ ছেলেমেয়েকে দেখেছি বাসায় দল বেঁধে পড়তে আসতে। তারা আমাদের খুব সম্মান করত। আমরাও শিক্ষক হিসাবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতাম। এলাকায় মাথা উচুঁ করে হাঁটতাম। সেই আমরাই গত বছরের জুন জুলাইয়ের দিকে শিক্ষক হিসাবে নিজেদের পরিচয় দিতে লজ্জিত হয়েছি। জনসম্মুখে পারতপক্ষে কাউকে বলতে ইচ্ছা করেনি আমি ছাত্র বা ছাত্রী পড়াই। শিক্ষকদের উঁচু ইমেজটাকে যে লোকটি ধূলোতে মিশিয়ে দিয়েছে, শিক্ষক হয়ে ছাত্রীর চরম সর্বনাশ করতে যার বুকে একটুও বাঁধেনি সেই মানুষ রূপী নরপিশাচটি ছিল পরিমল জয়ধর। সে সময়টায় পরিমল এতোটাই আলোচিত সমালোচিত হয়েছে যে তার নামটি ছিল সবার মুখে মুখে। পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেলগুলোতে এসেছে তার কুকীর্তির খবর। ফান ম্যাগাজিন গুলোও বসে ছিলনা। বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো ফান ম্যাগাজিনে তাকে নিয়ে রচিত হয়েছে বিভিন্ন ব্যঙ্গাত্বক রচনা ও কার্টুন। অন্যান্য ফান ম্যাগাজিনের মতো পরিমলকে নিয়ে থেরাপির অবদানও কম নয়। তাকে নিয়ে থেরাপির প্রায় একটি সংখ্যাই করা হয়। সংখ্যাটি ছিল থেরাপির ২৭৫ তম সংখ্যা। প্রকাশিত হয় ২০ জুলাই। বরাবরের মতোই বুধবারে। সংখ্যাটির প্রচ্ছদ করেছিলেন রিফাত আল হাসান। তিনি ছিলেন এককালের থেরাপির স্বনামধন্য কার্টুনিস্ট। 'না,না,আমি শিক্ষক না!' এই ক্যাপশনে সুন্দর একটা কার্টুন উপহার দিয়েছেন রিফাত। এর মাধ্যমে শিক্ষক হিসাবে একজন মানুষের শঙ্কিত হওয়ার অভিব্যক্তি সুন্দর ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ভিতরে পাতায় শাহাদাত ফাহিম লিখেছেন,'বখাটে শিক্ষক থেকে বাঁচার উপায়।' তিনি তার ব্যঙ্গাত্বক রম্য রচনায় অসাধু ও চরিত্রহীন গুরু বা শিক্ষক কর্তৃক যৌন হয়রানির হাত থেকে বাঁচার জন্য ছাত্রীদের ছয়টি টিপস দিয়েছেন। তিনি ছাত্রীদের মোবাইলে বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজ বাসায় বসেই কোচিংয়ে অংশ নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। ইকবাল খন্দকার তার 'ওই টাইপের শিক্ষকদের প্রতি' নামক লেখায় ওই টাইপ বলতে কাদের টাইপ বা কার টাইপ শিক্ষকদের কথা বলেছেন তা কিন্তু পরিষ্কার বুঝা যায়। ঠিক ধরেছেন, তিনি পরিমল জয়ধর টাইপ শিক্ষকদের কথাই বলেছেন। তিনি তার লেখার প্রথম অংশে বলেছেন, 'তিনি শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করেন। তিনি শ্রদ্ধা করেন এই জন্য যে কারণ তারা হলেন আদর্শ মানুষ। কিন্তু কিছু কিছু শিক্ষক আছে যারা এই পেশায় আসে আদর্শ শিক্ষকদের মানসম্মান নষ্ট করার জন্য। ' তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন বাংলা ব্যাকরণ বই থেকে 'চরিত্র অমূল্য সম্পদ' এই রচনাটি ভালো করে পড়তে। তার ধারণা যদি রচনাটা ওই সব শিক্ষকদের পড়া থাকে তাহলে হয়তো তারা চরিত্রকে জলাঞ্জলি দিতে পারতেন না। লেখার শেষ অংশে এইসব চরিত্রহীন শিক্ষকদের শাস্তি দেওয়ার জন্য তাদের ভাস্কর্য নির্মানের পরামর্শ দেন তিনি। তাদের ভাস্কর্য স্থাপন করে নির্দিষ্ট স্থানে থু থু ফেলে ঘৃণা প্রকাশের ব্যবস্থা করা হলে তাহলে তাদের তো ভালোই শরম হবে, যারা ভবিষ্যতে এই টাইপের কাজ করার চিন্তা ভাবনা করবে,তারাও বাপের জন্মের জন্য সাবধান হয়ে যাবে। শুধু রম্য লেখা না, সেই সংখ্যায় পরিমলকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল কার্টুন আইডিয়া। সেই কার্টুন আইডিয়াটি তৈরি করেছেন তপু রায়হান, এঁকেছেন ইন্দ্রজিৎ ইমন। আইডিয়ার শিরোনাম ছিল 'ছাত্রী নির্যাতনকারীর শাস্তি'।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thanks.