শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১২

বদঅভ্যাস!

cartoon- indrajit emon
বদঅভ্যাস!
অনামিকা মন্ডল
বদ অভ্যাস মানুষকে কতটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে, তার হাতেনাতে প্রমান মিলল গতকাল! ক্লাশ করবনা বলে ভেবেছিলাম দেরি করে উঠব তাই মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম ৯ টার। হঠাৎ মনে হল এলার্ম বাজতেছে, ঘুম ভাঙল। মোবাইল দেখলাম, বাজে ৭ টা। আজব! তখন্‌ও আ্‌ওয়াজটা হচ্ছিল, তবে মোবাইল থেকে নয়, পাশের ফ্লাট থেকে। তাল পরার আ্‌ওয়াজ, কিন্তু আশে পাশে তো তাল গাছ নাই! পরে খোজঁ খবর নিয়ে একটা এঙ্ক্লুসিভ বদ অভ্যাসের দেখা পেলাম।
মুনিয়া, আমার সমবয়সী, পাশের ফ্লাটে থাকে। ওর একটা ব্যাড হ্যাবিট, সারাদিন যা যা করবে রাতে ঘুমের ঘোরে সব বলতে থাকে! ও নিজেও জানে সেটা, ভাগ্যিস ও রাতে একা ঘুমায় তাই এযাবৎ কোন প্রবলেমে পরে নাই। গতকালের আগেরদিন ্‌ওর বাবা অফিসের কাজে বাইরে গিয়েছেন, এদিকে ্‌ওর মা দুপুর থেকে হৈ চৈ করছেন, ১০০০ টাকা নাকি বিছানার নিচে রেখেছিলেন এখন পাচ্ছেন না! পৌনে দুপুরের দিকে ‌ওদের দরজার সামনে রাখা স্যান্ডেলগুলো চুরি হয়ে যায়! সারাটাদিন ্‌ওদের জন্য নেগেটিভ ছিল। রাতে আন্টি আর কোনো রিস্ক নিতে চাইলেন না। মুনিয়াকে ডেকে বললেন আজ মা-মেয়ে একসাথে ঘুমাবে! মুনিয়াতো পুরা হতভম্ব! ‌ও তো কিছুতেই একসাথে ঘুমাতে চাচ্ছে না, কিন্তু আন্টির ধমকের কাছে হার মানতে হোলো ‌ও কে।
ভোরের দিকে হঠাৎ আন্টির ঘুম ভেঙে যায়, মুনিয়ার বিড় বিড় করা কথাগুলো শুনতে চেস্টা করে আন্টি। মুনিয়া যা বলছিল তা এরকম----
--"ভোলা (মুনিয়ার বয়ফ্রেইন্ড), কাল তোমার লগে বাণিজ্য মেলায় যামু। তোমারতো একখান ভালা জাম্‌াও নাই! এই ন্‌াও ১০০০ টাকা, মার বিছানার নিচ থাইকা লুকাইয়া আনছি। এইডা দিয়া জামা কিনবা আর বাকি টাকা মেলায় য্‌াওনের ভাড়া। যাইগা, মা পান কিনতে পাঠাইছে। তাড়াতাড়ি য্‌াওন লাগব, বাই।"
এসব শোনার পর আন্টি তার কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করলেন, ঠুস ঠাস আহ! তারপর জিজ্ঞেস করলেন, "দরজার সামনের জুতোগুলোও কি তুই সরাইছোস?"

মুনিয়া রেগে রেগে বলল,
"আরেকটু পর ডাক দিলেইতো শুনতে পেতে! ভোলারে ১০০০ টাকা দেয়ার সময় ভুলে পান কেনার ৫০ টাক্‌াও দিয়ে দিই। পরে ভাংগা চুরা নেয় এমন র্ফে‌িওলার কাছে জুতোগুলো বিক্রি করে ৫০টাকা পাই যা দিয়ে পান নিয়ে আইছিলাম।"
যাই হোক এসব শুনে বাসায় ফিরে এলাম, এসে দেখি আমার কাজিন অনন্যা গ্রাম থেকে এসে পরেছে। খুব খুশিত হলাম, মুনিয়ার কাহিনী সবিস্তরে বর্ণনা করলাম ্‌ওর কাছে। আমি বলছিলাম আর হাসছিলাম কিন্তু ্‌ওর ভাব দেখে মনে হল মুনিয়ার প্রতি ্‌ওর দরদ বেয়ে বেয়ে পরছে! দুপুরে খেয়ে দেয়ে দুজন আমার রুমে এলাম। ও জার্নি করে এসেছে তাই ্‌ওর রেস্ট দরকার এদিকে সকালে আমার ঘুমট্‌াও ভাল হয় নাই তাই ভাবলাম দুজনে একটা মিনি ঘুম দেই।
আবার হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে গেল শব্দে! চোখ মেলে দেখি অনন্যা জোরে জোরে হাসতেছে! আমি জিজ্ঞেস করলাম হইছেটা কি! ‌ও বলল, আজ ক্লাশ মিস দিছিস, কারন তুই টায়ার্ড, কারণ তুই গতকাল বাণিজ্য মেলায় গিয়েছিলি ফ্রেইন্ডস দের সাথে। আন্টিকে না বলে গিয়েছিলি কারণ বললে যেতে দিত না। .. .. ..
আমি ্‌ওকে থামিয়ে দিলাম। আকাশ থেকে পরলেও এতটা অবাক হতাম না যতটা ্‌ওর মুখ থেকে কথাগুলো শোনার পর হয়েছিলাম! জিজ্ঞেস করলাম, "এত কিছু জানলি কি করে?" ্‌ও বলল যে আমি নাকি ঘুমের ঘোরে এসব বলছিলাম! কি আজব! মুনিয়ার বদঅভ্যাসটা কি তাইলে ্‌ওর বাসা থেকে আমার বাসায় ট্রান্সফার হইয়া আসল! মহা বিপদ!
anamika.aana92@yahoo.com

1 টি মন্তব্য:

thanks.