বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১২

সামবডি হেল্প মি!

সামবডি হেল্প মি!
ইন্দ্রজিৎ ইমন

কম্পিউটারের সামনে বসে পত্রিকার জন্য একটা লেখা তৈরি করছি। এমন সময় রনি এলো। রনি আমার বন্ধু। আমি খানিকটা বিরক্ত হলাম। কারণ লেখার সময় কারো আসাটা আমার তেমন একটা পছন্দের না। তার উপর লেখাটা শেষ করে ঘন্টা খানেকের মধ্যে মেইল করতে হবে। কথা বলে সময় নষ্ট করার মতো সময়ও নেই। তাই রনির দিকে ফিরেও তাকালাম না। রনি একটা চেয়ার টেনে আমার পাশে বসল। মনিটরের দিকে তাকিয়ে বলল,'কিরে গল্প লিখছিস বুঝি?' প্রশ্নটা শুনে আমার রাগ লাগে। বললাম, 'কি যে বলিস না,আমি গল্প লেখছি কোথায়? আমি তো কুতকুত খেলছি!' রনি আমার রাগটা বুঝতে পেরে বলল,'আরে রাগ করছিস কেন? আমি একটু বিপদে পরেছি বলেই তো তোর কাছে এসেছি। নয়তো তোর লেখা সময় তোকে ডিস্টাব করতাম না। আমি ভালো করেই জানি তুই লেখার সময় ডিস্টাব করাটা লাইক করিস না।' আমি রনির দিকে ভ্রু কুঁচকি তাকিয়ে বললাম,'কি বিপদ?' রনি বলল,' আর বলিস না, আমার খালাতো বোন মিশু আমাদের বাসা এসে হাজির। বলে কিনা তাকে বাণিজ্যমেলায় নিয়ে যেতে হবে।' আমি অবাক হয়ে বললাম,'সেটা তো ভালো কথা,যা ঘুরে আয়।' রনি হাত কচলে বলল,'এখানেই তো বিপদ। আসলে ..' আমি রনিকে থামিয়ে বললাম,'ওহ! বুঝতে পেরেছি,কিছু টাকা ধার দিতে হবে,এই তো?' রনি বলল, 'ধার পেলে মন্দ হতো না,তবে তোর কাছে কেউ কোনদিন ধার চেয়ে পেয়েছে এমন কথাতো কখনো শুনি নাই। তাই,তোর কাছে ধার চাইতে আসব এমনটা ভাবছিস কেন?' রনির কথা শুনে আমি একটু অপমানবোধ করি। তবে তার চেয়ে বেশি স্বস্তি পাই। বললাম,'তাহলে?' রনি বলল,'আসলে আমি মিশুকে বলেছি,বাণিজ্যমেলায় যাইবা, এইটা কোন ব্যাপার। ঠিক আছে নিয়ে যাবো। কিন্তু এখন টেনশনে আছি। কারণ বাণিজ্যমেলাটা কোথায় যেটাই তো জানি না! মিশুকে নিয়ে যাবো কি?' রনির কথা শুনে অবজ্ঞার সুরে বললাম, তুই দেখি একটা আস্ত গাধা। এতো বড় হয়েছিস এখনো জানিস না বাণিজ্যমেলা কোথায় হয়? আফসোস! তোর তো কচু গাছে ফাঁসি দিয়ে মরা উচিত।' রবিন আমার কথা শুনে লজ্জা পায়। মিন মিন করে বলল,' আরে জানি না বলেই তো তোর কাছে এলাম। প্লীজ দোস্ত তাড়াতাড়ি বল কিভাবে যাবো। মিশু আমার জন্য ওয়েট করছে।' আমি বললাম,'দাঁড়া লেখাটা শেষ করে নেই। তারপর বলছি। কারণ তুই তো হলি আবার হাসমত। তোকে আবার ডিটেলসে বলতে হয়।' রনি কিছু বলে না। চুপ কওে থাকে। আমি লেখায় মনোযোগ দেওয়ার ভান করি। সত্যি কথা বলতে কি ঢাকার বাণিজ্যমেলায় আমি নিজেও কখনো যাই নাই। যদিও এইমেলা নিয়ে বেশকিছু লেখা লিখেছি। কিভাবে যায় এই মুহূর্তে আমি তাও মনে করতে পারছি না। কিন্তু রনিকে এই কথা বলব তারও উপায় নাই। কারণ ওদের সাথে বাণিজ্যমেলা নিয়ে অনেক চাপাবাজি করেছি। এই সম্পর্কিত সর্বশেষ চাপাটি ঝেড়েছিলাম গত রবিবার। বলেছি,'জানিস আজ আমি সারাদিন পারু সাথে হাতে হাত রেখে বাণিজ্যমেলায় ঘুরলাম। অনেক কিছু কিনলাম,খেলাম। সব খরচ পারু দিয়েছে। পারু অন্য দশটা মেয়ের মতো না। সে অনেক ভালো। আমাকে কোন টাকা খরচ করতে দেয় না। বরং নিজেই আমার জন্য অনেক খরচ করে। এই দেখ আমাকে আজ এই মোবাইলটা কিনে দিয়েছে।' মূলত,সেদিনই মোবাইলটা আমি নিজেই কিনেছি নারায়নগঞ্জের এক মোবাইলের মাকের্ট থেকে। আর পারু হচ্ছে আমার কল্পিত গার্লফ্রেন্ড। বাস্তবে পারু নামের কাউকে আমি চিনি না। কোন গার্লফ্রেন্ড তার বয়ফ্রেন্ডকে মোবাইল কিনে দেয় এই কথা গাধারাও বিশ্বাস না করলেও আমার বন্ধুরা ঠিকই বিশ্বাস করে। কারণ আমি চাপাটা ভালোই মারতে পারি। যাই হোক, এখন আমি কি করি! সামবডি হেল্প মি প্লীজ!!!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thanks.