হায়রে সেঞ্চুরি সেলিব্রেশন!অনামিকা মণ্ডল
অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম কিছু একটা করা দরকার, যাতে হাত খরচটা কামাই করা
যায়। তাই বন্ধু-বান্ধবীরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম একটা কোচিং সেন্টার খুলব।
একটা মোটামুটি লেভেলের কোচিং সেন্টার খোলার খরচও কম নয়! টিচার বাবদ খরচটা
লাগবে না, কারণ বেশ যোগ্যতাসম্পন্ন ১০ জন আছি আমরা। এখন দরকার একটা
ফ্ল্যাট, কিছু বেঞ্চ, হোয়াইট বোর্ড ইত্যাদি ইত্যাদি।
সবাই কিছু কিছু বিনিয়োগ করে একটা কোচিং সেন্টার দাঁড় করালাম। প্রথম প্রথম সেখানে স্টুডেন্টের চেয়ে টিচারই বেশি ছিল! আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অভিভাবকের প্রক্সিদিত। রিয়েল অভিভাবকদের দেখিয়ে দেখিয়ে আমাদের সামনে এসে বলত, 'স্যার, আমার ভাইটিকে আপনার কোচিংয়ে দিতে চাই। এর অনেক সুনাম শুনেছি, আমাদের এলাকার অনেকেই ভর্তি হতে আসবে। পরে যদি সিট না পাই তাই আগে আগে এসে বলে রাখলাম!' বেশ ভালই মজা পেতাম আমরা, তবে খুব সিরিয়াস মুডে থাকতাম তখন!
এত কিছুর পরও স্টুডেন্টের সংখ্যা কচ্ছপের গতিতে বাড়তে লাগল। কারণ প্রচারের জন্য যে খরচ দরকার তা আমাদের হাতে ছিল না। সংসারের ঘানি টানার মতো তিন মাস ধরে টেনে নিচ্ছিলাম কোচিং সেন্টারটাকে। সামনে কোচিং সেন্টারটির ১০০তম দিন, কিছু আয়োজন করা দরকার। লক্ষ্য একটাই_প্রচার করা। এভাবে আর কতদিন চলা যায়! লাভ তো দূরের কথা, চালান নিয়েই টানাটানি! সবাই মিলে ঠিক করলাম যেভাবেই হোক পাবলিসিটি করতে হবে। ভাবতে লাগলাম কোন উপায়ে স্বল্প খরচে বিজ্ঞাপন দেওয়া যায়। কিন্তু টিভি, রেডিও, সংবাদপত্র সব জায়গাতেই মোটা অঙ্কের টাকা লাগে বিজ্ঞাপন দিতে! হঠাৎ একদিন এক আজব বুদ্ধি মাথায় এলো! সবাই মিলে প্লান করতে বসলাম...
প্লানটা ছিল, আমরা ১০ জন দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে যাব। ১০০তম দিনে দুই গ্রুপ মিলে মারামারি করব, বেশ কিছু ক্লাসমেটদের ইনভাইট করে এই প্ল্যানটা জানাব, তারপর ওদের ভাগাভাগি করে নিব ২ গ্রুপে। সিনেমাতে যেমন ফলস মারামারি হয়, ঠিক ওরকম মারামারি করব আমরা। সবাই জানবে কোচিং সেন্টারটির সেঞ্চুরি দিবস পালন করা নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ। এতে মিডিয়ায় লেখালেখি হবে, সবাই এর নাম জানবে।
'যেখানে গণ্ডগোল সেখানেই মিডিয়া দল' কথায় বিশ্বাসী ছিলাম আমরা। তাই নির্দিষ্ট দিনে যথাসময়ে কোচিং সেন্টারের সামনের রাস্তায় ভিড় জমাই। গত কয়েকদিন ধরেই মারামারির রিহার্সাল করছিলাম। তাই সংকেত পাওয়া মাত্রই সংঘর্ষে নেমে পড়লাম, প্রথম দিকে ভালোই লাগছিল। রাস্তার দুই ধারে মানুষ জড়ো হয়ে গেল। হঠাৎ সত্যি সত্যি একটা প্রাইভেট কারের গ্লাস ভেঙে গেল, কার লাঠির আঘাতে ভাঙল বোঝা গেল না! প্রাইভেট কারটি ছিল এলাকার প্রভাবশালী এক ব্যক্তির, সুতরাং বানোয়াট মারামারিটা সত্যিকারের ভয়ংকর রূপ ধারণ করল। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি করতে করতে দেখি পুলিশের গাড়ির আওয়াজ, ইতিমধ্যে আমাদের আকাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন মিডিয়ার মানুষজনও চলে এসেছে। অবস্থা চরম খারাপ রূপ নেয়। আমাদের কয়েকজন ক্লাসমেটকে আটক করল পুলিশ।
পরদিন প্রায় সব পেপারে, রেডিও-টিভিতে নিউজটা আসে। নিউজটা ছিল এমন_নামের এক কোচিং সেন্টার বিনা পয়সায় প্রচার পাওয়ার অপচেষ্টায় গতকাল 'পাতানো মারামারি' শুরু করে। যার ফলে এলাকায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, ভাঙচুর হয় কয়েকটি গাড়ি। জনজীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে... ইত্যাদি ইত্যাদি! পুলিশ পাঁচজনকে আটক করে ওই কোচিং সেন্টারটিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।
anamika.aana92@yahoo.com
সবাই কিছু কিছু বিনিয়োগ করে একটা কোচিং সেন্টার দাঁড় করালাম। প্রথম প্রথম সেখানে স্টুডেন্টের চেয়ে টিচারই বেশি ছিল! আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অভিভাবকের প্রক্সিদিত। রিয়েল অভিভাবকদের দেখিয়ে দেখিয়ে আমাদের সামনে এসে বলত, 'স্যার, আমার ভাইটিকে আপনার কোচিংয়ে দিতে চাই। এর অনেক সুনাম শুনেছি, আমাদের এলাকার অনেকেই ভর্তি হতে আসবে। পরে যদি সিট না পাই তাই আগে আগে এসে বলে রাখলাম!' বেশ ভালই মজা পেতাম আমরা, তবে খুব সিরিয়াস মুডে থাকতাম তখন!
এত কিছুর পরও স্টুডেন্টের সংখ্যা কচ্ছপের গতিতে বাড়তে লাগল। কারণ প্রচারের জন্য যে খরচ দরকার তা আমাদের হাতে ছিল না। সংসারের ঘানি টানার মতো তিন মাস ধরে টেনে নিচ্ছিলাম কোচিং সেন্টারটাকে। সামনে কোচিং সেন্টারটির ১০০তম দিন, কিছু আয়োজন করা দরকার। লক্ষ্য একটাই_প্রচার করা। এভাবে আর কতদিন চলা যায়! লাভ তো দূরের কথা, চালান নিয়েই টানাটানি! সবাই মিলে ঠিক করলাম যেভাবেই হোক পাবলিসিটি করতে হবে। ভাবতে লাগলাম কোন উপায়ে স্বল্প খরচে বিজ্ঞাপন দেওয়া যায়। কিন্তু টিভি, রেডিও, সংবাদপত্র সব জায়গাতেই মোটা অঙ্কের টাকা লাগে বিজ্ঞাপন দিতে! হঠাৎ একদিন এক আজব বুদ্ধি মাথায় এলো! সবাই মিলে প্লান করতে বসলাম...
প্লানটা ছিল, আমরা ১০ জন দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে যাব। ১০০তম দিনে দুই গ্রুপ মিলে মারামারি করব, বেশ কিছু ক্লাসমেটদের ইনভাইট করে এই প্ল্যানটা জানাব, তারপর ওদের ভাগাভাগি করে নিব ২ গ্রুপে। সিনেমাতে যেমন ফলস মারামারি হয়, ঠিক ওরকম মারামারি করব আমরা। সবাই জানবে কোচিং সেন্টারটির সেঞ্চুরি দিবস পালন করা নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ। এতে মিডিয়ায় লেখালেখি হবে, সবাই এর নাম জানবে।
'যেখানে গণ্ডগোল সেখানেই মিডিয়া দল' কথায় বিশ্বাসী ছিলাম আমরা। তাই নির্দিষ্ট দিনে যথাসময়ে কোচিং সেন্টারের সামনের রাস্তায় ভিড় জমাই। গত কয়েকদিন ধরেই মারামারির রিহার্সাল করছিলাম। তাই সংকেত পাওয়া মাত্রই সংঘর্ষে নেমে পড়লাম, প্রথম দিকে ভালোই লাগছিল। রাস্তার দুই ধারে মানুষ জড়ো হয়ে গেল। হঠাৎ সত্যি সত্যি একটা প্রাইভেট কারের গ্লাস ভেঙে গেল, কার লাঠির আঘাতে ভাঙল বোঝা গেল না! প্রাইভেট কারটি ছিল এলাকার প্রভাবশালী এক ব্যক্তির, সুতরাং বানোয়াট মারামারিটা সত্যিকারের ভয়ংকর রূপ ধারণ করল। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি করতে করতে দেখি পুলিশের গাড়ির আওয়াজ, ইতিমধ্যে আমাদের আকাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন মিডিয়ার মানুষজনও চলে এসেছে। অবস্থা চরম খারাপ রূপ নেয়। আমাদের কয়েকজন ক্লাসমেটকে আটক করল পুলিশ।
পরদিন প্রায় সব পেপারে, রেডিও-টিভিতে নিউজটা আসে। নিউজটা ছিল এমন_নামের এক কোচিং সেন্টার বিনা পয়সায় প্রচার পাওয়ার অপচেষ্টায় গতকাল 'পাতানো মারামারি' শুরু করে। যার ফলে এলাকায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, ভাঙচুর হয় কয়েকটি গাড়ি। জনজীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে... ইত্যাদি ইত্যাদি! পুলিশ পাঁচজনকে আটক করে ওই কোচিং সেন্টারটিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।
anamika.aana92@yahoo.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thanks.