আকরামের প্রেমিকাত্রয় এবং অতঃপর.. ..
ইন্দ্রজিৎ ইমন
ভ্যালেন্টাইন যদি একদিন না হয়ে দু'দিন হতো তাহলে অনেক ভালো হতো। আকরামের
কথাটা শুনে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,কেন? সে বলল, দূর! একদিনে কি আর চলে।
আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, চলে মানে? তুই চলে বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছিস
ক্লীয়ার করে বল। আকরাম বলল, তুই তো জানিস আমি তোদের দোয়ায় তিন তিনটা প্রেম
করি। এখন তিন তিনটা প্রেমিকাকে কিভাবে একই দিনে সময় দেই, তুই-ই বল? তাছাড়া
একাধিক প্রেম করতে গেলে অনেক সাবধানে থাকতে হয়। তিনজনকে সর্ম্পূণ তিনটি
আলাদা জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতে হয়। কারণ সাবধানের মাইর নাই। অনেক সমস্যা
আছেরে দোস্ত, অনেক সমস্যা। আমি বললাম,দোস্ত,আগেই বলে রাখি এইসব ফলস প্রেমের
ক্ষেত্রে আমি দোয়া করি না। কারণ আমার দোয়া এতো সস্তা না যে আলতু-ফালতু
কাজে করব। তবে সিরিয়াসলি যদি কারো সাথে প্রেম করিস তবে আমি অবশ্যই দোয়া
করব। দু'হাত তুলেই দোয়া করব। তুই তো জানিস ভালো কাজে আমি সব সময়ই
উদারপন্থী। দোয়া এবং উপদেশের কখনই কমতি হয় না আমার কাছে থেকে। যাই হোক,
এইবার মূল প্রসঙ্গে আসি। হুম, তিন তিনটা প্রেমিকাকে সামলানো চারটি খানি কথা
না। তবে সামলানোও সম্ভব। একটু বুদ্ধি খাটালেই দেখবি কত সহজে সামলানো যায়।
আকরাম বলল,কিভাবে? আমি বললাম,তুই ভ্যালেন্টাইন ডে'তে তোর তিন প্রেমিকার
মধ্যে দুইজনকে বল যে তোর প্রচন্ড জ্বর। আজ কোন মতে বাসা থেকে বের হতে পারবি
না। তারপর তৃতীয় প্রেমিকাকে নিয়ে সারাদিন নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়া। তোদের
বাঁধা দিতে কেউ আসবে না। আকরামের ভাব দেখে মনে হল যে সে আমার বুদ্ধিটা লাইক
করেছে। ফেসবুক হলে শিউর করে বলতে পারতাম সত্যিই লাইক করেছে কিনা। কারণ
সেখানে একটা লাইক বাটন আছে। টিপে দিলেই হয়। কিন্তু বাস্তব ক্ষেতে সেই রকম
কোন বাটন নেই বলেই অনুমান করেই বলতে হচ্ছে মনে হয় লাইক করেছে। আমিও বন্ধুকে
একটা সুবুদ্ধি দিতে পেরে ভালো ফিল করছি। যদিও বুদ্ধিটা ফ্রিতে দিলাম,তাতে
কি? তাছাড়া সবার সাথে কি ব্যবসা করা চলে?
আজ ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ।
মানে বিশ্ব পেয়ার-মহ্বতের দিবস। আকরাম নিজের রুমে বসে চিন্তা করছে কার সাথে
আজ ঘুরতে যাবে। তার মূলত তিনজনের সাথেই ঘুরতে যেতে ইচ্ছা করছে। এইদিকে
পকেটের অবস্থাও খুব খারাপ। কারো সাথে ঘুরতে যাওয়া মানেই দামী একটা গিফট
কিনে দিতে হবে। প্রচুর টাকার মামলা। হঠাৎ আকরামের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।
ভাবে তিনজনকেই বরং বলি যে আমি অসুস্থ। তাহলে আর আজ ঘুরতেও যেতে হবে না আবার
দামী গিফটও দিতে হবে না। যেমন ভাবা তেমন কাজ,আকরাম তিনজনকেই বলল যে তার
প্রচন্ড জ্বর। বিছানা থেকে উঠতেই পারছে না। তাই আজ আর ঘুরতে যেতে পারবে না।
সে সবার কাছে অনেকবার করে সরি বলে নিল। বলল,তার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু
হঠাৎ ভাইরাস জ্বরে তাকে কাবু করে ফেলেছে। আকরামের গার্লফ্রেন্ডরা আকরামের
অসুস্থতার কথা শুনে খুব দুঃখ প্রকাশ করল।
দুপুরের দিকে আকরাম বসার ঘরে
বসে টিভিতে বিপিএল খেলা দেখছে। তখন দরজার কলিংবেল বাজল। আকরাম দরজা খুলে
দেখে আর গার্লফ্রেন্ড পাপিয়া বিরাট একটা ফুলের তোড়া নিয়ে এসেছে তাকে দেখতে।
আকরামকে দেখেই বলল,হ্যাপী ভ্যালেন্টাইন ডে। তুমি অসুস্থ তাতে কি ? আমি তো
আর অসুস্থ না। তাই তোমাকে দেখতে চলে এলাম। আকরাম কি বলবে বুঝতে ছিল না।
পাপিয়া আকরামকে ঠেলে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, কিন্তু তোমাকে দেখে কিন্তু
অসুস্থ বলে মনে হচ্ছে না! আকরাম পাপিয়ার পিছু পিছু এসে সোফায় বসল। সে মূল
গেটের দরজা বন্ধ করতে ভুলে যায়। এই সময় আকরামের আরেক গার্লফ্রেন্ড লাবণী
এসে ঘরে ঢুকে। তার হাতেও ফুলের একটা বড় তোড়া। তারপর আসে আকরামের তৃতীয়
গার্লফ্রেন্ড সুরভী। তিন তিনটি গার্লফ্রেন্ডের একই দিনের একই সময়ে অকাঙ্গিত
আগমনে আকরাম হতভম্ব হয়ে যায়। সে কি করবে বুঝতে পারল না। যদিও তার তখন
করারও কিছু ছিল না। যা করার তার তিন প্রেমিকাই করল। যার যার আনা ফুলের তোড়া
তৎক্ষণাৎ রূপান্তরিত হলো ঝাড়ুতে। তারা তাদের ফুলের তোড়ার ঝাড়ু দিয়ে
আকরামের শরীরের ময়লা ঝাড়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠল। সেদিনের ঝাড়ানিতে আকরামের
শরীরের ময়লা কতটা পরিষ্কার হয়েছে সেটা জানা না গেলেও মনের ময়লা যে পুরোপুরি
পরিষ্কার হয়েছে সে ব্যাপারে আমি ১০০% শিউর। কারণ ইদানিং আকরামকে কোন মেয়ের
দিকে তাকাতে পর্যন্ত দেখি না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thanks.