আরিফ-অহনা এবং আমরা কয়েকজন
ইন্দ্রজিৎ ইমন
আমরা পাঁচ বন্ধু ঠিক করলাম সামনের বুধবার সবাই এক সাথে ঘুরব। যাদের গার্লফ্রেন্ড আছে তারা তাদের গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আসবে। আমাদের মধ্যে দুইজনই অনলি প্রেম করে। সেই সুভাগ্যবান দু'জন হচ্ছে আরিফ আর সজল। বাকি আমি সহ রিয়াজ ও রাজুর কপালে এখনও প্রেম জুটে নি। ভবিষ্যতে জুটবে কিনা তাতেও বিস্তর সন্দেহ আছে। যাই হোক,নির্দিষ্ট দিনে আমি আর সজল এক ফাস্টফুডের দোকানে বসে বাকিদের জন্য ওয়েট করছি। সজলের গার্লফ্রেন্ডও এখনো আসেনি। এসে পড়বে কিছুক্ষণের মধ্যে। এখন রিকশায় আসে। সজল ফোন করে জেনেছে। সজলের গার্ল ফ্রেন্ডের নাম বিভা। তাদের প্রেমটা নতুন। তাই বিভার সাথে আমাদের তেমন একটা পরিচয় নাই। সজলের মোবাইলে বিভার ছবি দেখেছি। মেয়েটা দেখতে আহামরি কিছু নয়। কিন্তু সজল তাতে ডন্ট কেয়ার। কারণ যেন তেন হোক, অবশেষে একটা প্রেম হয়েছে এতেই সে মহা খুশী। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে সজলই সবচেয়ে বেশি দুঃখ করত তার জীবনে প্রেম নাই বলে। কত মেয়েকে যে প্রপোজ করেছে তা আর বলে শেষ করা যাবে না। তবে একটা মেয়ের কথা না বললেই নয়। এলাকার বড়ভাই আলিফ ভাইয়ের কাছে কলেজ পড়ুয়া কিছু ছেলেমেয়ে পড়তে আসত। হঠাৎ সজল আবিষ্কার করল তার কাছে একটা সুন্দর মতো মেয়ে নিয়মিত পড়তে আসে। আর যায় কোথায়, কয়েকদিনের পর্যবেক্ষণে মেয়েটার সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে ফেলল সজল। মানে তার নাম কি,কখন, কি কি বার সে আলিফ ভাইয়ের কাছে পড়তে আসে এই সব আর কি। একদিন মেয়েটি পড়া শেষে বাড়ি ফিরছে। সজলও তার পিছু পিছু হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে প্রায় মেয়েটা বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। বাড়ি ভিতরে ঢুকবে হঠাৎ কি হলো মেয়েটা ঘুরে তাকাল। সজল দৌড় দিবে কিনা ভাবছে। কিন্তু সে দৌড় দিল না। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল। সজলের হার্ডবিট তখন ফুল স্প্রীডে ড্রাম পিটাচ্ছে। মেয়েটা সজলকে বলল,মামা,ভিতরে আসুন। মা দেখলে আপনাকে অনেক খুশি হবে। আমি মাকে বলেছি আপনি আমাকে সব সময় চোখে চোখে রাখেন। শুনে মা অনেক খুশি। সজল মিন মিন করে বলল,মানে? মেয়েটি অবাক হয়ে বলল,সে কি আপনি আমাকে চিনতে পারেন নি! আমি হলাম আপনার বন্ধু আকরামের বড় বোনের মেয়ে। আমার নাম টুসি,চিনতে পেরেছেন? আমি ছোট থাকতে অনেকবার মামার বাসায় আপনাকে দেখেছি। সজল সেদিন দারুন বোকা হয়েছিল। যাইহোক, সেসব এখন অতীত। সজল এখন বিভাকে নিয়ে অনেক ভালো আছে।
রিয়াজ ও রাজু এসেছে। দু'জনেই আজ মান্ধা মেরে এসেছে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম আজ নাকি তারা দু'জন ভালোবাসার মিশন নিয়ে বের হবে। বিশেষ এই দিনে যদি ভালোবাসাই না পায় তাহলে তো জীবনটাই বিথা। আমরা চারজন বসে ঠিক করছি আজকের দিনে কোথায় কোথায় যাবো। যদিও ঠিক করা ছিল বইমেলা যাবো। কিন্তু বইমেলাতো বিকালে। এর আগে কি করা যায় তা-ই নিয়ে ভাবছি। এরই মধ্যে বিভা এসে আমাদের সাথে যোগ দিলো। আরিফটা যে কি? সবার আসার কথা ছিল দশটার মধ্যে কিন্তু এখন বাজে সাড়ে এগারটা। আরিফদের খবর নাই। আরিফকে ফোন দেওয়া হলো। আরিফ জানাল ওর গার্ল ফ্রেন্ড এখনও আসেনি। আসলেই দু'জন এক সাথে চলে আসবে। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে আরিফই সবচেয়ে বেশি স্মার্ট ও চটপটে। প্রেমের ভাগ্যও ওর অনেক ভালো। আরিফ যে মেয়েটার সাথে প্রেম করে তার নাম অহনা। অহনা দেখতে খুব সুন্দর। যেমন সুন্দর দেখতে তেমন তার গানের গলা। অহনার জন্য আমরা বরাবরই আরিফকে হিংসা করতাম। ভাবতাম ইস! যদি অহনার মতো একটা গার্লফ্রেন্ড পেতাম তাহলে জীবনাটা ধন্য হয়ে যেতো। পাঁচ বছর ধরে ওদের সম্পর্ক। এই পাঁচ বছরে অহনাকে আমরা যতই দেখেছি ততোই অবাক হয়েছি। এতো ভালো কোন মেয়ে হতে পারে!
বারটার দিকে আরিফ এসে হাজির। সাথে তার গার্লফ্রেন্ড। আমরা সবাই ভীষণ অবাক হয়ে দেখলাম যে আরিফ যে মেয়েটাকে নিয়ে এসেছে সে মেয়েটা অহনা না। আমরা বন্ধুরা একে-অপরের দিকে তাকালাম। কেউ বুঝতে পাললাম না ঘটনা কি। আরিফ নিজেই আমাদের সাথে মেয়েটিকে পরিচয় করে দিল। বলল,আমার গার্লফ্রেন্ড জেরিন। আমরা জেরিনের সাথে পরিচিত হলাম। কিন্তু অহনার জন্য আমার খুব খারাপ লাগে। কি করে অহনাকে বাদ দিয়ে অন্য কোন মেয়েকে ভালবাসতে পারে আরিফ! আমার মনে সন্দেহ জাগল। আরিফ আমাদের সাথে মজা করছে নাতো! মজা করতেই পারে। আরিফের মতো ফাজিলের দ্বারা কোন কিছু অসম্ভব নয়।
আমরা বিল পে করে ফাস্টফুড থেকে বের হয়ে এলাম। ঠিক হলো আমরা সবাই ঘন্টা খানেক রিকশা করে ঘুরব। সজল-বিভা, আরিফ-জেরিন আর আমরা বাকি তিনজন তিনটা রিকশা নিলাম। সজলদের রিকশাটা সবার সামনে,তারপর আরিফদের এবং সর্বশেষে আমাদের রিকশা। রাজু বলল, দেখলি,আরিফটা কি করল? এতদিনের প্রেম ভুলে এখন কিনা নতুন মেয়ে নিয়ে ঘুরছে! রিয়াজ বলল,ইস! যদি অহনার ফোন নম্বরটা থাকত তাহলে দেখাতাম মজা। আমি রিয়াজকে বললাম,অহনার ফোন নম্বর থাকলে কি করতি? রিয়াজ রেগে বলল,কি করতাম মানে? এখনই ফোন করে জানাতাম যে আরিফ আরেকটা মেয়ে নিয়ে ঘুরছে। তখন দেখতি কি মজা। আমি বললাম, তাহলে জানা। আমার কাছে তো অহনার ফোন নম্বর আছে।
অহনা জেরিনের সামনে আরিফকে তুলা-ধুণা করছে। আরিফটা এমনই ফাজিল যে একটুও লজ্জা না পেয়ে মুঁচকি মুঁচকি হাসছে। আরিফের হাসি দেখে অহনা আরো রেগে যায়। আসলে ঘটনা হয়েছে কি আরিফ যখন আজ অহনাকে বলল ঘুরতে যাওয়ার কথা তখন অহনা বলেছে ওর নাকি মাথা ব্যথা। আজ বের হতে পারবে না। এইদিকে আরিফ আমাদেরও বলে রেখেছে যে সে তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আসবে। এখন কি করে। তাই সে খালাতো বোন জেরিনকে ম্যানেজ করে। আর আমাদের সাথে মজা করার জন্য বলেছে জেরিন ওর গার্লফ্রেন্ড। আমরা কিনা.. ..! যাই হোক, আরিফ-অহনার ভালোবাসা দীর্ঘজীবি হোক এই কামনা করি।
ইন্দ্রজিৎ ইমন
আমরা পাঁচ বন্ধু ঠিক করলাম সামনের বুধবার সবাই এক সাথে ঘুরব। যাদের গার্লফ্রেন্ড আছে তারা তাদের গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আসবে। আমাদের মধ্যে দুইজনই অনলি প্রেম করে। সেই সুভাগ্যবান দু'জন হচ্ছে আরিফ আর সজল। বাকি আমি সহ রিয়াজ ও রাজুর কপালে এখনও প্রেম জুটে নি। ভবিষ্যতে জুটবে কিনা তাতেও বিস্তর সন্দেহ আছে। যাই হোক,নির্দিষ্ট দিনে আমি আর সজল এক ফাস্টফুডের দোকানে বসে বাকিদের জন্য ওয়েট করছি। সজলের গার্লফ্রেন্ডও এখনো আসেনি। এসে পড়বে কিছুক্ষণের মধ্যে। এখন রিকশায় আসে। সজল ফোন করে জেনেছে। সজলের গার্ল ফ্রেন্ডের নাম বিভা। তাদের প্রেমটা নতুন। তাই বিভার সাথে আমাদের তেমন একটা পরিচয় নাই। সজলের মোবাইলে বিভার ছবি দেখেছি। মেয়েটা দেখতে আহামরি কিছু নয়। কিন্তু সজল তাতে ডন্ট কেয়ার। কারণ যেন তেন হোক, অবশেষে একটা প্রেম হয়েছে এতেই সে মহা খুশী। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে সজলই সবচেয়ে বেশি দুঃখ করত তার জীবনে প্রেম নাই বলে। কত মেয়েকে যে প্রপোজ করেছে তা আর বলে শেষ করা যাবে না। তবে একটা মেয়ের কথা না বললেই নয়। এলাকার বড়ভাই আলিফ ভাইয়ের কাছে কলেজ পড়ুয়া কিছু ছেলেমেয়ে পড়তে আসত। হঠাৎ সজল আবিষ্কার করল তার কাছে একটা সুন্দর মতো মেয়ে নিয়মিত পড়তে আসে। আর যায় কোথায়, কয়েকদিনের পর্যবেক্ষণে মেয়েটার সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে ফেলল সজল। মানে তার নাম কি,কখন, কি কি বার সে আলিফ ভাইয়ের কাছে পড়তে আসে এই সব আর কি। একদিন মেয়েটি পড়া শেষে বাড়ি ফিরছে। সজলও তার পিছু পিছু হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে প্রায় মেয়েটা বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। বাড়ি ভিতরে ঢুকবে হঠাৎ কি হলো মেয়েটা ঘুরে তাকাল। সজল দৌড় দিবে কিনা ভাবছে। কিন্তু সে দৌড় দিল না। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল। সজলের হার্ডবিট তখন ফুল স্প্রীডে ড্রাম পিটাচ্ছে। মেয়েটা সজলকে বলল,মামা,ভিতরে আসুন। মা দেখলে আপনাকে অনেক খুশি হবে। আমি মাকে বলেছি আপনি আমাকে সব সময় চোখে চোখে রাখেন। শুনে মা অনেক খুশি। সজল মিন মিন করে বলল,মানে? মেয়েটি অবাক হয়ে বলল,সে কি আপনি আমাকে চিনতে পারেন নি! আমি হলাম আপনার বন্ধু আকরামের বড় বোনের মেয়ে। আমার নাম টুসি,চিনতে পেরেছেন? আমি ছোট থাকতে অনেকবার মামার বাসায় আপনাকে দেখেছি। সজল সেদিন দারুন বোকা হয়েছিল। যাইহোক, সেসব এখন অতীত। সজল এখন বিভাকে নিয়ে অনেক ভালো আছে।
রিয়াজ ও রাজু এসেছে। দু'জনেই আজ মান্ধা মেরে এসেছে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম আজ নাকি তারা দু'জন ভালোবাসার মিশন নিয়ে বের হবে। বিশেষ এই দিনে যদি ভালোবাসাই না পায় তাহলে তো জীবনটাই বিথা। আমরা চারজন বসে ঠিক করছি আজকের দিনে কোথায় কোথায় যাবো। যদিও ঠিক করা ছিল বইমেলা যাবো। কিন্তু বইমেলাতো বিকালে। এর আগে কি করা যায় তা-ই নিয়ে ভাবছি। এরই মধ্যে বিভা এসে আমাদের সাথে যোগ দিলো। আরিফটা যে কি? সবার আসার কথা ছিল দশটার মধ্যে কিন্তু এখন বাজে সাড়ে এগারটা। আরিফদের খবর নাই। আরিফকে ফোন দেওয়া হলো। আরিফ জানাল ওর গার্ল ফ্রেন্ড এখনও আসেনি। আসলেই দু'জন এক সাথে চলে আসবে। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে আরিফই সবচেয়ে বেশি স্মার্ট ও চটপটে। প্রেমের ভাগ্যও ওর অনেক ভালো। আরিফ যে মেয়েটার সাথে প্রেম করে তার নাম অহনা। অহনা দেখতে খুব সুন্দর। যেমন সুন্দর দেখতে তেমন তার গানের গলা। অহনার জন্য আমরা বরাবরই আরিফকে হিংসা করতাম। ভাবতাম ইস! যদি অহনার মতো একটা গার্লফ্রেন্ড পেতাম তাহলে জীবনাটা ধন্য হয়ে যেতো। পাঁচ বছর ধরে ওদের সম্পর্ক। এই পাঁচ বছরে অহনাকে আমরা যতই দেখেছি ততোই অবাক হয়েছি। এতো ভালো কোন মেয়ে হতে পারে!
বারটার দিকে আরিফ এসে হাজির। সাথে তার গার্লফ্রেন্ড। আমরা সবাই ভীষণ অবাক হয়ে দেখলাম যে আরিফ যে মেয়েটাকে নিয়ে এসেছে সে মেয়েটা অহনা না। আমরা বন্ধুরা একে-অপরের দিকে তাকালাম। কেউ বুঝতে পাললাম না ঘটনা কি। আরিফ নিজেই আমাদের সাথে মেয়েটিকে পরিচয় করে দিল। বলল,আমার গার্লফ্রেন্ড জেরিন। আমরা জেরিনের সাথে পরিচিত হলাম। কিন্তু অহনার জন্য আমার খুব খারাপ লাগে। কি করে অহনাকে বাদ দিয়ে অন্য কোন মেয়েকে ভালবাসতে পারে আরিফ! আমার মনে সন্দেহ জাগল। আরিফ আমাদের সাথে মজা করছে নাতো! মজা করতেই পারে। আরিফের মতো ফাজিলের দ্বারা কোন কিছু অসম্ভব নয়।
আমরা বিল পে করে ফাস্টফুড থেকে বের হয়ে এলাম। ঠিক হলো আমরা সবাই ঘন্টা খানেক রিকশা করে ঘুরব। সজল-বিভা, আরিফ-জেরিন আর আমরা বাকি তিনজন তিনটা রিকশা নিলাম। সজলদের রিকশাটা সবার সামনে,তারপর আরিফদের এবং সর্বশেষে আমাদের রিকশা। রাজু বলল, দেখলি,আরিফটা কি করল? এতদিনের প্রেম ভুলে এখন কিনা নতুন মেয়ে নিয়ে ঘুরছে! রিয়াজ বলল,ইস! যদি অহনার ফোন নম্বরটা থাকত তাহলে দেখাতাম মজা। আমি রিয়াজকে বললাম,অহনার ফোন নম্বর থাকলে কি করতি? রিয়াজ রেগে বলল,কি করতাম মানে? এখনই ফোন করে জানাতাম যে আরিফ আরেকটা মেয়ে নিয়ে ঘুরছে। তখন দেখতি কি মজা। আমি বললাম, তাহলে জানা। আমার কাছে তো অহনার ফোন নম্বর আছে।
অহনা জেরিনের সামনে আরিফকে তুলা-ধুণা করছে। আরিফটা এমনই ফাজিল যে একটুও লজ্জা না পেয়ে মুঁচকি মুঁচকি হাসছে। আরিফের হাসি দেখে অহনা আরো রেগে যায়। আসলে ঘটনা হয়েছে কি আরিফ যখন আজ অহনাকে বলল ঘুরতে যাওয়ার কথা তখন অহনা বলেছে ওর নাকি মাথা ব্যথা। আজ বের হতে পারবে না। এইদিকে আরিফ আমাদেরও বলে রেখেছে যে সে তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আসবে। এখন কি করে। তাই সে খালাতো বোন জেরিনকে ম্যানেজ করে। আর আমাদের সাথে মজা করার জন্য বলেছে জেরিন ওর গার্লফ্রেন্ড। আমরা কিনা.. ..! যাই হোক, আরিফ-অহনার ভালোবাসা দীর্ঘজীবি হোক এই কামনা করি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thanks.