দৌড়ের ওপর আছি!
দৌড়ের ওপর আছি!
ইন্দ্রজিৎ ইমন
‘হরি দিন তো গেল, সন্ধ্যে হলো পার করো আমারে...।’ বছরের এই শেষলগ্নে এসে
পুরনো এই গানের কলি কিছুটা পরিবর্তন করে গাইতে বড় ইচ্ছা করছে ‘ওরে মাস তো
গেল বছর গেল, পার করো আমারে!’ মূল গানের পারের সঙ্গে আমার নতুন সংশোধন করা
গানের পারের বিস্তর ফারাক। মূল গানে গায়ক সৃষ্টিকর্তার কাছে পরপারে তাকে
যথার্থভাবে পার করার জন্য প্রার্থনা করলেও আমি আমার সংশোধিত চয়ন দু’টি
দ্বারা আরেক পারের জন...্য
সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছি। আর সেই নদীটা পার হওয়া ছাত্রছাত্রীদের
জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। হুম, আপনারা ঠিক ধরেছেন, আমি পরীক্ষা নামক নদীর
কথাই বলছি। খেলিতে খেলিতে কখন যে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে, টের পাইনি।
রুটিন করে সবকিছু করা হলেও মূল কাজটি করা হয়নি এত দিন। আর সেটা হলো
পড়ালেখা। মোটেও ভালো লাগে না আমার পড়ালেখা করতে। বই নিয়ে বসলেই মাথা ঘুরায়।
চারদিকে অন্ধকার দেখি। বন্ধু শুভকে আমার অসহ্য লাগে। শুভ খুব খারাপ ছেলে
তা কিন্তু নয়। বরং অন্য দশজনের তুলনায় সে বেশ ভালো। তাকে অসহ্য লাগার কারণ
হচ্ছে, সে সুযোগ পেলেই আমাকে পড়ার কথা বলে। বলে ‘এই যে সারাদিন গায়ে বাতাস
লাগিয়ে ঘুরিস, এটা কি ঠিক? কিছু পড়াশোনা করলেও তো পারিস? বছর শেষে তো
পরীক্ষায় ঘোড়ার আন্ডা পাবি।’ বিষয়টা ভাবুন। একে তো বাবা-মা ননস্টপ বলে পড়ার
কথা, তার ওপর যদি বন্ধু-বান্ধবও পড়ার কথা বলে, তাহলে সহ্য হয়? তাই
বছরজুড়েই শুভকে এড়িয়ে চলেছি। বাসায় দেখা করতে এলে বাসার মানুষের বিশেষ করে
কাজের ছেলে বাদলকে দিয়ে বলে পাঠাতাম যে, আমি বাসায় নেই। এটুকু মিথ্যা বলার
জন্যও বাদলকে উপঢৌকন দিতে হতো। তবে শুভর বেরিং প্যাঁচাল থেকে বাদলকে ১০-২০
টাকা উপঢৌকন দেয়া আমার কাছে বেশি যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হতো। কে যেন বলেছিল,
(নাকি নিজের অবচেতন মনের কথা কিনা কে জানে!) ‘লেখাপড়া হচ্ছে আনস্মার্ট
ছেলেমেয়েদের জন্য। স্মার্ট ছেলেরা লেখাপড়া করে না। তারা কলেজে যায় শুধু
কলেজের জুনিয়র সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে টাঙ্কি মারতে।’ আমি নিজেকে যথেষ্ট
স্মার্ট মনে করি। তাই আনস্মার্ট ছেলেমেয়েদের মতো ঘরে বসে ওম দেয়া মুরগির
মতো ঝুমতে ঝুমতে পড়তে পারি না! পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে
আড্ডা দেয়া, মেয়েদের স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে টাঙ্কি মারা, ডেটিং করা, কত
কাজ! আমার তার ওপর ফেসবুকিং। আমার পড়ে সময় নষ্ট করার মতো সময় আছে, আপনারাই
বলেন? কিন্তু হায়! বছরের এই ক্লান্তিলগ্নে, পরীক্ষায় এসে যখন নাকে সুড়সুড়ি
দিচ্ছে তখন এই আমিই দৌড়াচ্ছি শুভদের পিছু পিছু। তাদের কাছ থেকে কিছুমিছু
মানে পরীক্ষার সাজেশন্স ও নোটস পাওয়ার আশায়। কারণ বাবা হুকুম জারি করেছেন,
যদি এবার পরীক্ষায় পাস করতে না পারি, তাহলে আমার বাসার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ।
শুধু খাওয়া-দাওয়া না, বাবা পিএল মানে পশ্চাতে লাথি মেরেও বাসা থেকে বের করে
দেবেন। আমি আমার বাবার হোটেল হেলায় হারাতে চাই না। তাই যেকোনো মূল্যে
পরীক্ষায় পাস করার জন্য দৌড়ের ওপর আছি!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thanks.