অতি চালাকের গলায় দড়ি
ইন্দ্রজিৎ ইমন
বইমেলা প্রায় শেষ। এইদিকে সজীবকে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে যা বুঝার বুঝে গেলাম। যদিও প্রশ্ন করার কারণ ছিল না তবু করলাম,
- কিরে সজীব, মন খারাপ করে বসে আছিস যে? তোর কবিতার বইয়ের কাটতি কেমন?
- একই প্রশ্ন প্রতিদিন করার কি আছে? জানিসই তো কেমন কাটতি!
- ইয়ে মানে তোকে কখনও মাথা হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখি নাই তো তাই জিজ্ঞেস করলাম আর কি। যাইহোক, গতকাল যে এক কপি বিক্রি হয়েছিল সে বইটা কি আজ ফিরিয়ে দিয়ে গেছে!
- না,সেটা হলেও বরং ভালো ছিল। আজ যা ঘটেছে এর পরে আর ঐশীকে মুখ দেখাতে পারব না।
ঐশী সজীবের গার্লফ্রেন্ড। আমি সজীবের কথায় অবাক হয়ে বললাম,
- মানে? ঐশীর সাথে কি এমন হয়েছে যে তাকে আর মুখ দেখাতে পারবি না?
সজীব একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
- তাহলে ঘটনা খুলেই বলি। আজ সকালে ঐশী ফোন করে বলল যে সে মেলায় আসবে। আর আমার বইয়ের কাটতি কেমন তা দেখবে। সম্ভব হলে এক কপি বইও কিনবে। ঐশীর কথা শুনে তো আমি মহা খুশি। আমার গার্লফ্রেন্ড আমার বই কিনতে আসবে এর চেয়ে ভালো আর কি খবর হতে পারে? কিন্তু তার সামনে তো আর বলা যায় না যে আমার বইয়ের কাটতি নাই। কারণ প্রেস্টিস বলে কথা। তাই বইয়ের স্টলে বসা ছেলেটা সহ কয়েকটা ছেলেকে ম্যানেজ করলাম যাতে ঐশীর সামনে আমার বইয়ের প্রশংসা করে।
আমি বললাম,
- গুড প্ল্যান। তা প্লানটা কি কাজে লাগে নাই?
সজীব দাঁতে দাঁত কামড়ে বলল,
- সব গুলো হলো গর্দভের দল। গর্দভ গুলোর জন্য সব প্ল্যান বেস্তে গেল।
- কিভাবে?
- তাহলে শোন।
সজীব বলতে শুরু করল.. ..
- বিকাল পাঁচটার দিকে এক সুন্দরী মেয়ে স্টলে এসে বই নেড়ে চেড়ে দেখছে। বিভিন্ন বই দেখতে দেখতে এক সময় আমার বইটা তুলে নেয়। পাতা উল্টে দেখে। স্টলের ছেলেটা ভাবে এই মেয়েই বুঝি ঐশী। আর যায় কোথায়, আমার কবিতার বইয়ের প্রশংসা করতে শুরু করে। মেয়েটা প্রশংসা শুনে কি করবে বুঝতে ছিল না। এমন সময় ক্রেতা হিসাবে আরেকটি ছেলে আসে। বলে,সজীব মাহমুদের 'প্রেম তুমি কেঁদ না' বইটা কি আছে? দোকানী বলল, আছে। তার হাতে বইটা তুলে দিতে দিতে বলল,আর মাত্র পাঁচটা কপি আছে। ইতিমধ্যে সব কপি শেষ। মে বি সজীব মাহমুদের এই বইটা এইবারের মেলায় বেস্ট সেলার হতে যাচ্ছে। তারপর একে একে বাকিরা এসে আমার বইয়ের প্রশংসা ও এক কপি করে কিনে নিয়ে যায়। মেয়েটা এতক্ষণে সিউর হয়ে যায় যে সজীব মাহমুদ মানে আমি একজন বড় কবি। তাই সে এই বইটা না কিনে মিস করতে চায় না। তখনই এক কপি কিনে নেয়। মেয়েটি বইটি কিনে আমার কাছে এগিয়ে আসে অটোগ্রাফের জন্য। পুরো ঘটনাটা আমি দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করি। বুঝতে পারি গর্দভ গুলো ঐশী ভেবে মেয়েটির সাথে এইসব করছে। আমি তাদের থামিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু কেন জানি থামাতে ইচ্ছা করল না। আসলে মেয়েটা খুব সুন্দরী ছিল। যাই হোক, যা বলছিলাম। মেয়েটা আমার কাছে এসে তার সদ্য কেনা আমার লেখা কবিতার বইটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,অটোগ্রাফ প্লীজ। আমিও ভাব নিয়ে সুন্দর করে অটোগ্রাফ দিলাম। মেয়েটা আমার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলল। আমি কবে থেকে লিখি। এটা আমার কততম বই। আমার কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা কে এইসব জিজ্ঞেস করল আর কি। আমিও সুন্দর ভাবে তার প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাই। এইদিকে হয়েছে কি ঐশী এসে আমর বইটা দেখছে। কিন্তু স্টলের ছেলেটার সেদিকে মনোযোগ নাই। ঐশী ছেলেটার চোখ অনুসরণ করে আমাদের দিকে তাকায়। আমাকে ঐ মেয়েটার সাথে কথা বলতে দেখে ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে,
- আচ্ছা, উনি সজীব মাহমুদ না মানে 'প্রেম তুমি কেঁদনা'র লেখক?
ছেলেটা বলল,
- হুম।
- পাশে ঐ মেয়েটা কে?
- সজীব মাহমুদের গার্ল ফ্রেন্ড।
ছেলেটার কথা শুনে ঐশীর গা জ্বলে যায়। সে আমার দিকে এগিয়ে আসে। এদিকে মেয়েটাও বিদায় নেয়।
আমি বললাম,
-তারপর?
সজীব দুঃখ করতে করতে বলল,
- তারপর আর কি ? ঐশী আমাকে ঝাড়তে শুরু করে। আমি যতই বলি মেয়েটার সাথে আমার কোন রিলেশন নাই ঐশী ততোই আমাকে অবিশ্বাস করে। এইদিকে চরম সর্বনাশ করে ঐ গর্দভ গুলো। ঐশী থাকা অবস্থায় আমাকে বলল,ভাই কেমন অভিনয় করলাম। আপনার গার্লফ্রেন্ড গুণাক্ষরেও বুঝতে পারে নাই যে পুরো ব্যাপারটাই ছিল সাজানো। এখন বলেন আমাদের কি খাওয়াবেন ?
সজীবের ঘটনা শুনে আমি ভাব নিয়ে বললাম,হুম বুঝলাম। অতি চালাকের গলায় দড়ি।
ইন্দ্রজিৎ ইমন
বইমেলা প্রায় শেষ। এইদিকে সজীবকে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে যা বুঝার বুঝে গেলাম। যদিও প্রশ্ন করার কারণ ছিল না তবু করলাম,
- কিরে সজীব, মন খারাপ করে বসে আছিস যে? তোর কবিতার বইয়ের কাটতি কেমন?
- একই প্রশ্ন প্রতিদিন করার কি আছে? জানিসই তো কেমন কাটতি!
- ইয়ে মানে তোকে কখনও মাথা হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখি নাই তো তাই জিজ্ঞেস করলাম আর কি। যাইহোক, গতকাল যে এক কপি বিক্রি হয়েছিল সে বইটা কি আজ ফিরিয়ে দিয়ে গেছে!
- না,সেটা হলেও বরং ভালো ছিল। আজ যা ঘটেছে এর পরে আর ঐশীকে মুখ দেখাতে পারব না।
ঐশী সজীবের গার্লফ্রেন্ড। আমি সজীবের কথায় অবাক হয়ে বললাম,
- মানে? ঐশীর সাথে কি এমন হয়েছে যে তাকে আর মুখ দেখাতে পারবি না?
সজীব একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
- তাহলে ঘটনা খুলেই বলি। আজ সকালে ঐশী ফোন করে বলল যে সে মেলায় আসবে। আর আমার বইয়ের কাটতি কেমন তা দেখবে। সম্ভব হলে এক কপি বইও কিনবে। ঐশীর কথা শুনে তো আমি মহা খুশি। আমার গার্লফ্রেন্ড আমার বই কিনতে আসবে এর চেয়ে ভালো আর কি খবর হতে পারে? কিন্তু তার সামনে তো আর বলা যায় না যে আমার বইয়ের কাটতি নাই। কারণ প্রেস্টিস বলে কথা। তাই বইয়ের স্টলে বসা ছেলেটা সহ কয়েকটা ছেলেকে ম্যানেজ করলাম যাতে ঐশীর সামনে আমার বইয়ের প্রশংসা করে।
আমি বললাম,
- গুড প্ল্যান। তা প্লানটা কি কাজে লাগে নাই?
সজীব দাঁতে দাঁত কামড়ে বলল,
- সব গুলো হলো গর্দভের দল। গর্দভ গুলোর জন্য সব প্ল্যান বেস্তে গেল।
- কিভাবে?
- তাহলে শোন।
সজীব বলতে শুরু করল.. ..
- বিকাল পাঁচটার দিকে এক সুন্দরী মেয়ে স্টলে এসে বই নেড়ে চেড়ে দেখছে। বিভিন্ন বই দেখতে দেখতে এক সময় আমার বইটা তুলে নেয়। পাতা উল্টে দেখে। স্টলের ছেলেটা ভাবে এই মেয়েই বুঝি ঐশী। আর যায় কোথায়, আমার কবিতার বইয়ের প্রশংসা করতে শুরু করে। মেয়েটা প্রশংসা শুনে কি করবে বুঝতে ছিল না। এমন সময় ক্রেতা হিসাবে আরেকটি ছেলে আসে। বলে,সজীব মাহমুদের 'প্রেম তুমি কেঁদ না' বইটা কি আছে? দোকানী বলল, আছে। তার হাতে বইটা তুলে দিতে দিতে বলল,আর মাত্র পাঁচটা কপি আছে। ইতিমধ্যে সব কপি শেষ। মে বি সজীব মাহমুদের এই বইটা এইবারের মেলায় বেস্ট সেলার হতে যাচ্ছে। তারপর একে একে বাকিরা এসে আমার বইয়ের প্রশংসা ও এক কপি করে কিনে নিয়ে যায়। মেয়েটা এতক্ষণে সিউর হয়ে যায় যে সজীব মাহমুদ মানে আমি একজন বড় কবি। তাই সে এই বইটা না কিনে মিস করতে চায় না। তখনই এক কপি কিনে নেয়। মেয়েটি বইটি কিনে আমার কাছে এগিয়ে আসে অটোগ্রাফের জন্য। পুরো ঘটনাটা আমি দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করি। বুঝতে পারি গর্দভ গুলো ঐশী ভেবে মেয়েটির সাথে এইসব করছে। আমি তাদের থামিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু কেন জানি থামাতে ইচ্ছা করল না। আসলে মেয়েটা খুব সুন্দরী ছিল। যাই হোক, যা বলছিলাম। মেয়েটা আমার কাছে এসে তার সদ্য কেনা আমার লেখা কবিতার বইটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,অটোগ্রাফ প্লীজ। আমিও ভাব নিয়ে সুন্দর করে অটোগ্রাফ দিলাম। মেয়েটা আমার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলল। আমি কবে থেকে লিখি। এটা আমার কততম বই। আমার কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা কে এইসব জিজ্ঞেস করল আর কি। আমিও সুন্দর ভাবে তার প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাই। এইদিকে হয়েছে কি ঐশী এসে আমর বইটা দেখছে। কিন্তু স্টলের ছেলেটার সেদিকে মনোযোগ নাই। ঐশী ছেলেটার চোখ অনুসরণ করে আমাদের দিকে তাকায়। আমাকে ঐ মেয়েটার সাথে কথা বলতে দেখে ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে,
- আচ্ছা, উনি সজীব মাহমুদ না মানে 'প্রেম তুমি কেঁদনা'র লেখক?
ছেলেটা বলল,
- হুম।
- পাশে ঐ মেয়েটা কে?
- সজীব মাহমুদের গার্ল ফ্রেন্ড।
ছেলেটার কথা শুনে ঐশীর গা জ্বলে যায়। সে আমার দিকে এগিয়ে আসে। এদিকে মেয়েটাও বিদায় নেয়।
আমি বললাম,
-তারপর?
সজীব দুঃখ করতে করতে বলল,
- তারপর আর কি ? ঐশী আমাকে ঝাড়তে শুরু করে। আমি যতই বলি মেয়েটার সাথে আমার কোন রিলেশন নাই ঐশী ততোই আমাকে অবিশ্বাস করে। এইদিকে চরম সর্বনাশ করে ঐ গর্দভ গুলো। ঐশী থাকা অবস্থায় আমাকে বলল,ভাই কেমন অভিনয় করলাম। আপনার গার্লফ্রেন্ড গুণাক্ষরেও বুঝতে পারে নাই যে পুরো ব্যাপারটাই ছিল সাজানো। এখন বলেন আমাদের কি খাওয়াবেন ?
সজীবের ঘটনা শুনে আমি ভাব নিয়ে বললাম,হুম বুঝলাম। অতি চালাকের গলায় দড়ি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thanks.