স্পট ফিক্সিং
অনামিকা মন্ডল
বিপিএল তো শেষ, এশিয়া কাপ চলতেছে.. ..! প্রতিদিন ২টা বাজলেই টিভির সামনে বসে যেতাম বিপিএল দেখবো বলে। পুরো দেশের মত আমার এলাকাতেও চলছিল বিপিএল নিয়ে মাতামাতি আর এখন এশিয়া কাপ নিয়ে মাতামাতি চলছে। আমি এই এলাকাতেই ছোট থেকে বড় হয়েছি, মেয়েদের মধ্যে খুব ভাল ক্রিকেটার হিসেবে আমার সুনাম এলাকার প্রত্যেকটা গলি পর্যন্ত জানে। এছাড়া আমার গুনধর বড় ভাইয়ের কল্যানে আমাকে এই এলাকার সবাই যথেষ্ট সম্মান দেয় বলে আমার বিশ্বাস। আমার বড় ভাই শুধু আমার নয়, পুরো এলাকার বড় ভাইয়ের সম্মান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তাকে সবাই ক্যাপ প্রত্যয় নামে চেনে, কারন ভাইয়ার যে কতগুলো ক্যাপ আছে তা সে নিজেই বলতে পারবে না।
যাই হোক, একদিন দেখি প্রায় ডজন খানেক এলাকাতো ভাই-বোন আমার কাছে আসল। আমিতো প্রথম প্রথম ভয়ই পেয়ে যাই, পরে পুরো ঘটনা শোনার পরতো গর্বে একদম ... .. .. হয়ে যাবার দশা! ওরা নাকি বিপিএল খেলবে! টিম রেডী, কোচিং শেষ এখন শুধু খেলা বাকী। অবাক হবেন না, এই বিপিএল এর ফুল মিনিং হচ্ছে বাচ্চা পোলাপাইন লীগ! এই দলগুলোর ক্রিকেটারগন ম্যাঙ্মিাম ই ৮-৯ এ পড়ে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, প্রত্যেকটা দলে ৪ জন করে মেয়ে ক্রিকেটার রয়েছে! টোটাল দল ৩টা। আসল বিপিএলএর মত ক্রিকেটাররা নিলামে না উঠলেও রীতিমত টস করে করে মেয়েদেরকে নিয়ে দল গঠন করেছে প্রত্যেকটা দল। এখন ভাবার বিষয়, এরা আমার কাছে এসেছে কেন! যেহেতু আমি এলাকার প্রাক্তন প্রমিলা ক্রিকেটার তাই আম্পায়ারিং এর দয়িত্বটা নাকি আমাকেই নিতে হবে! আমিতো এই দায়িত্ব পালন করতে কিছুতেই রাজী হচ্ছিলাম না কিন্তু ওদের করুন আকুতি শুনে রাজী না হয়ে পারলাম না। যদিও অনেকদিন পরে খেলার জন্যে মাঠে নামতে পেরে অন্নেক ভাল লাগছিল, তারউপর আবার আউট হবার কোনো সম্ভাবিলিটি নাই সুতরাং সোনায় সোহাগা!
এরপর থেকে দিন গুনছিলাম কবে আসবে খেলার দিন! কোন ড্রেস পরে মাঠের মাঝখানে দাড়িয়ে থাকবো সেটাও অনেক চিন্তা ভাবনার বিষয়। যেহেতু টি-২০ ম্যাচ সুতরাং কালারফুল ড্রেস পরা যাবে, মাথায় আম্পায়ার স্টাইলে ক্যাপ পরতে হবে। খেলার কোন সিটুয়েশনে কিভাবে হাত-পা নাড়াতে হয় আই মিন আম্পায়ারের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করার জন্যে বাসায় বসে অনেক রিহেয়ারশেল করে নিয়েছিলাম। খেলোয়াড়রাও এত্ত প্রাকটিস করছে কিনা ডাউট আছে!
এদিকে বাচ্চা পোলাপাইন লীগ নিয়ে তো এলাকায় হৈ চৈ পরে গিয়েছে। প্লেয়ারদের স্পন্সারস ও জুটে গেল। এলাকায় দুইটা নাম করা টি-স্টল, একটা মুদি স্টল ছিল। এরা ৩টা দলকে স্পন্সার করেছে। এই স্পন্সারের বিষয়টা একটু ভিন্ন। প্রাকটিক্যাল ক্ষেত্রে স্পন্সাররা দলকে টাকা দেয়, আর এ ক্ষেত্রে হলো উল্টো! দলের প্লেয়ারসরা এটা নিশ্চিত করে নিয়েছে যে, যদি স্টলগুলো তাদের স্পন্সার করে তবে তারা সারাজীবন সেই সেই স্টলের বান্ধা কাস্টমার হয়ে থাকবে! এত্ত বড় একটা লীগ হচ্ছে সেখানে স্পন্সার না থাকলে ভাল দেখায় না বলেই এই সিস্টেম করা হয়েছে। তবে এ কথাটা না বলাটাই ব্যাটার যে বুদ্ধিটা আমারই ছিল।
যাই হোক নির্দিস্ট দিনে খেলা শুরু হবার আগ মুহূর্ত! সব্বাই এক্সাইটেড! দর্শক ভালই হয়েছে কেননা কোন টিকেট সিস্টেম ছিলনা। আমি আরো বেশী এক্সাইটেড ছিলাম শেষের দিকে ভয়ও পাচ্ছিলাম কেননা খেলা স্টার্ট হতে আর ১৫ মিনিট বাকি কিন্তু তখনও আমি পার্লারএ! কোনমতে খেলা শুরু হবার আগেই মাঠে আসতে পেরেছিলাম। এসে দেখি ম্যাচ রেফারীর মাধ্যমে টস হয়ে গেছে, নিয়মানুযায়ী মাঠে ২ দলের নির্দিস্ট পরিমান প্লোয়ারস মাঠে প্রবেশ করেছে। আমি অনেকটা মিনি দৌড় দিয়ে মাঠের মাঝখানে চলে আসি। ক্যাপটা হাতে ছিল, বেশ ভাব নিয়ে সেটা মাথায় পরি। সংগে সংগে মাঠের এক প্রান্তে চিৎকার শুরু হয়! মনে হচ্ছিল খেলা শেষ, বিজয়ী দলের সাপোর্টাররা চেচাচ্ছে। কিন্তু খেলারতো এখনও এক বলও হয় নি! সেই চিৎকার অনেকটা ঝগড়ায় রূপান্তরিত হওয়ায় আমরা খেলা ফেলে সেখানে যাই। সেখানে গিয়ে আসল কাহিনী শুনেতো আমি নাই!!! ঘটনা হচ্ছে, ২টা গ্রুপ বাজী ধরেছে যে আমি ভাইয়ার কোন কালারের ক্যাপটা পরে মাঠে আসবো আজ! বাজীতে হেরে যাওয়া দলটা বাজীর কথা অস্বীকার করলেই চিৎকারের উৎপত্তি হয় তারপর এটা ঝগড়ার স্থান লাভ করে।
এই ঘটনার পরে সবাই অনুমান করা শুরু করে ম্যাচটা বাজিকরদের হাতে পরেছে সুতরাং ম্যাচ ফিক্সিং হতে পারে ভেবে ম্যাচটা ক্যান্সেল করা হয়! আর আমাকে স্পট ফিক্সিং এর সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে তদন্তের স্বার্থে নিষিদ্ধ করা হয়!!!!
অনামিকা মন্ডল
বিপিএল তো শেষ, এশিয়া কাপ চলতেছে.. ..! প্রতিদিন ২টা বাজলেই টিভির সামনে বসে যেতাম বিপিএল দেখবো বলে। পুরো দেশের মত আমার এলাকাতেও চলছিল বিপিএল নিয়ে মাতামাতি আর এখন এশিয়া কাপ নিয়ে মাতামাতি চলছে। আমি এই এলাকাতেই ছোট থেকে বড় হয়েছি, মেয়েদের মধ্যে খুব ভাল ক্রিকেটার হিসেবে আমার সুনাম এলাকার প্রত্যেকটা গলি পর্যন্ত জানে। এছাড়া আমার গুনধর বড় ভাইয়ের কল্যানে আমাকে এই এলাকার সবাই যথেষ্ট সম্মান দেয় বলে আমার বিশ্বাস। আমার বড় ভাই শুধু আমার নয়, পুরো এলাকার বড় ভাইয়ের সম্মান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তাকে সবাই ক্যাপ প্রত্যয় নামে চেনে, কারন ভাইয়ার যে কতগুলো ক্যাপ আছে তা সে নিজেই বলতে পারবে না।
যাই হোক, একদিন দেখি প্রায় ডজন খানেক এলাকাতো ভাই-বোন আমার কাছে আসল। আমিতো প্রথম প্রথম ভয়ই পেয়ে যাই, পরে পুরো ঘটনা শোনার পরতো গর্বে একদম ... .. .. হয়ে যাবার দশা! ওরা নাকি বিপিএল খেলবে! টিম রেডী, কোচিং শেষ এখন শুধু খেলা বাকী। অবাক হবেন না, এই বিপিএল এর ফুল মিনিং হচ্ছে বাচ্চা পোলাপাইন লীগ! এই দলগুলোর ক্রিকেটারগন ম্যাঙ্মিাম ই ৮-৯ এ পড়ে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, প্রত্যেকটা দলে ৪ জন করে মেয়ে ক্রিকেটার রয়েছে! টোটাল দল ৩টা। আসল বিপিএলএর মত ক্রিকেটাররা নিলামে না উঠলেও রীতিমত টস করে করে মেয়েদেরকে নিয়ে দল গঠন করেছে প্রত্যেকটা দল। এখন ভাবার বিষয়, এরা আমার কাছে এসেছে কেন! যেহেতু আমি এলাকার প্রাক্তন প্রমিলা ক্রিকেটার তাই আম্পায়ারিং এর দয়িত্বটা নাকি আমাকেই নিতে হবে! আমিতো এই দায়িত্ব পালন করতে কিছুতেই রাজী হচ্ছিলাম না কিন্তু ওদের করুন আকুতি শুনে রাজী না হয়ে পারলাম না। যদিও অনেকদিন পরে খেলার জন্যে মাঠে নামতে পেরে অন্নেক ভাল লাগছিল, তারউপর আবার আউট হবার কোনো সম্ভাবিলিটি নাই সুতরাং সোনায় সোহাগা!
এরপর থেকে দিন গুনছিলাম কবে আসবে খেলার দিন! কোন ড্রেস পরে মাঠের মাঝখানে দাড়িয়ে থাকবো সেটাও অনেক চিন্তা ভাবনার বিষয়। যেহেতু টি-২০ ম্যাচ সুতরাং কালারফুল ড্রেস পরা যাবে, মাথায় আম্পায়ার স্টাইলে ক্যাপ পরতে হবে। খেলার কোন সিটুয়েশনে কিভাবে হাত-পা নাড়াতে হয় আই মিন আম্পায়ারের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করার জন্যে বাসায় বসে অনেক রিহেয়ারশেল করে নিয়েছিলাম। খেলোয়াড়রাও এত্ত প্রাকটিস করছে কিনা ডাউট আছে!
এদিকে বাচ্চা পোলাপাইন লীগ নিয়ে তো এলাকায় হৈ চৈ পরে গিয়েছে। প্লেয়ারদের স্পন্সারস ও জুটে গেল। এলাকায় দুইটা নাম করা টি-স্টল, একটা মুদি স্টল ছিল। এরা ৩টা দলকে স্পন্সার করেছে। এই স্পন্সারের বিষয়টা একটু ভিন্ন। প্রাকটিক্যাল ক্ষেত্রে স্পন্সাররা দলকে টাকা দেয়, আর এ ক্ষেত্রে হলো উল্টো! দলের প্লেয়ারসরা এটা নিশ্চিত করে নিয়েছে যে, যদি স্টলগুলো তাদের স্পন্সার করে তবে তারা সারাজীবন সেই সেই স্টলের বান্ধা কাস্টমার হয়ে থাকবে! এত্ত বড় একটা লীগ হচ্ছে সেখানে স্পন্সার না থাকলে ভাল দেখায় না বলেই এই সিস্টেম করা হয়েছে। তবে এ কথাটা না বলাটাই ব্যাটার যে বুদ্ধিটা আমারই ছিল।
যাই হোক নির্দিস্ট দিনে খেলা শুরু হবার আগ মুহূর্ত! সব্বাই এক্সাইটেড! দর্শক ভালই হয়েছে কেননা কোন টিকেট সিস্টেম ছিলনা। আমি আরো বেশী এক্সাইটেড ছিলাম শেষের দিকে ভয়ও পাচ্ছিলাম কেননা খেলা স্টার্ট হতে আর ১৫ মিনিট বাকি কিন্তু তখনও আমি পার্লারএ! কোনমতে খেলা শুরু হবার আগেই মাঠে আসতে পেরেছিলাম। এসে দেখি ম্যাচ রেফারীর মাধ্যমে টস হয়ে গেছে, নিয়মানুযায়ী মাঠে ২ দলের নির্দিস্ট পরিমান প্লোয়ারস মাঠে প্রবেশ করেছে। আমি অনেকটা মিনি দৌড় দিয়ে মাঠের মাঝখানে চলে আসি। ক্যাপটা হাতে ছিল, বেশ ভাব নিয়ে সেটা মাথায় পরি। সংগে সংগে মাঠের এক প্রান্তে চিৎকার শুরু হয়! মনে হচ্ছিল খেলা শেষ, বিজয়ী দলের সাপোর্টাররা চেচাচ্ছে। কিন্তু খেলারতো এখনও এক বলও হয় নি! সেই চিৎকার অনেকটা ঝগড়ায় রূপান্তরিত হওয়ায় আমরা খেলা ফেলে সেখানে যাই। সেখানে গিয়ে আসল কাহিনী শুনেতো আমি নাই!!! ঘটনা হচ্ছে, ২টা গ্রুপ বাজী ধরেছে যে আমি ভাইয়ার কোন কালারের ক্যাপটা পরে মাঠে আসবো আজ! বাজীতে হেরে যাওয়া দলটা বাজীর কথা অস্বীকার করলেই চিৎকারের উৎপত্তি হয় তারপর এটা ঝগড়ার স্থান লাভ করে।
এই ঘটনার পরে সবাই অনুমান করা শুরু করে ম্যাচটা বাজিকরদের হাতে পরেছে সুতরাং ম্যাচ ফিক্সিং হতে পারে ভেবে ম্যাচটা ক্যান্সেল করা হয়! আর আমাকে স্পট ফিক্সিং এর সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে তদন্তের স্বার্থে নিষিদ্ধ করা হয়!!!!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thanks.