মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১১

আনলাকি থ্রাটি ফাস্ট!

আনলাকি থ্রাটি ফাস্ট!
ইন্দ্রজিৎ ইমন

থ্রাটি ফাস্ট নাইটে আমি কখনও মজা করি না। মজা করি না না বলে বলা উচিত আমি আসলে ঐই রাতে মজা করতে পারি না। কারণ থ্রাটি ফাস্ট মানে ৩১ সংখ্যাটি আমার জীবনে আনলাকি একটা সংখ্যা। এই ৩১ সংখ্যাটি আমাকে কতবার যে বিপদে ফেলেছে তা বলে শেষ করা যাবে না। আমার জীবনে যতগুলো ৩১ সংক্রান্ত আনলাকিময় ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে দুইটি ঘটনা থেরাপির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

ঘটনা-১ : তখন আমি ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। স্যার দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার খাতা দিচ্ছেন। আমি ইংরেজী ১ম পত্রে ৩১ নম্বর পেয়েছি। এটা ছিল আমার জীবনে কোন বিষয়ে প্রথম ফেল মার্ক। স্যার খাতাটা দিলেন বাসায় দেখানোর জন্য। পরীক্ষার খাতা বাসায় অভিভাবকদের দেখিয়ে স্বাক্ষর নিতে হয়। সে খাতা পরেরদিন স্কুলে স্যার জমা নেন। খাতার উপর অভিভাবকের স্বাক্ষর না থাকলে তিনি কঠিন শাস্তি দেন। কিন্তু এই খাতা এখন বাসায় বা কিভাবে দেখাই! বাবা এমনেতেই খুব রাগী মানুষ। বাবার কয়েকটি প্রিয় কাজের মধ্যে একটি হলো আমাকে ঠেঙ্গানো। তার আদর্শ হচ্ছে,'মাইরের উপর ঔষধ নাই।' ছেলেমেয়েদের শাসন না করলে তারা নাকি মানুষ হবে না, হবে বাঁদর! বাবার এই মারমুখী স্বভাব দেখে তখন মনে হতো,ইস! বাবা যদি জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলতো তাহলে কতই না ভালো হতো। পুরা জাতি একজন হিট হিটার ব্যাটসম্যান পেতো। কিন্তু মনের কথা মনেই দেখে যেতো। বাবাকে বলার মতো দুঃসাহস কখনই দেখাই নাই। বাবা যতই রাগী হোক, খাতা তাকে দেখাতেই হবে। মাথা একটা কুবুদ্ধি আসে। খাতার উপরের ৩১ এর ৩ কে ব্ল্যাড দিয়ে তুলে সেখানে একই রকম ভাবে লাল কলম দিয়ে ৬ বানিয়ে দেই। তখন ৩১ হয়ে যায় ৬১। ৬১ নম্বরটা খুব একটা খারাপ না। আমি আসস্ত হই। সেদিন ইংরেজী ১ম পত্র ছাড়াও আরো দুইটা পরীক্ষার খাতা দেওয়া হয়। সেগুলোতে মোটামুটি ভালোই নম্বর পেয়েছি। তার মধ্যে অংকে পেয়েছি সবচেয়ে ভালো। ৮২। তাই অংকটাকে উপরের রেখে মাঝে ইংরেজী, তারপর অন্য খাতাটি (সমাজবিজ্ঞান) রেখে বাবাকে দেখতে দেই। কিন্তু হায়! বাবা আমার চালাকিটা ধরে ফেলে। তারপর আরকি,বাবার হাতে খেতে হয় জটিল মার।

ঘটনা-২ : আমি যখন অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ি তখন আমরা বাসা পরিবর্তন করি। উঠি নতুন বাসায়। বাসার নম্বরটা ছিল ৩১। এ বাসায় উঠার পর থেকে আমার জীবনে ঘটতে থাকে নানান রকম আনলাকি ঘটনা। আমরা থাকতাম দুই তলার ফ্ল্যাটে। নিচ তলার ফ্ল্যাটে একটি সুন্দরী মেয়ে থাকত। মেয়েটি এতোটাই সুন্দরী যে বোকার মতো অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করত। এই বাসায় উঠার প্রথম দিনই দেখেছিলাম মেয়েটাকে। কি সুন্দর মায়া ভরা মুখ তার। প্রথম দেখাই আমি মেয়েটার প্রেমে পড়ে যাই। তারপর থেকে মেয়েটাকে এক নজর দেখার জন্য ব্যকুল হয়ে থাকি। একদিন কলেজ থেকে বাসায় ফিরছি। দেখি মেয়েটা ভেজা কাপড়ের বালতি নিয়ে ছাদে যাচ্ছে। আমার যেন কি হলো। আমিও মেয়েটার পিছন পিছন ছাদে চলে এলাম। দুপুর বেলা। কড়া রোদ। ছাদে মেয়েটি আর আমি ছাড়া আর কেউ নাই। মেয়েটি আমার দিকে ফিরেও তাকাল না।সে নিজের মতো করে ভেজা কাপড় গুলো রোদে মেলে দিচ্ছে। আমি মেয়েটার ঠিক পিছনে এসে দাঁড়াই। মৃদু কাশি। মেয়েটা আমার দিকে তাকায়। আমি সাত-পাঁচ না ভেবে মেয়েটাকে প্রপোজ করে বসি। মেয়েটা আমার কথা শুনে রাগ করে না। আমার দিকে ভালো করে তাকায়। তার তাকানো দেখে আমার মনে হতে থাকে মেয়েটা প্রজেটিভ কিছু উত্তর দিবে। কিন্তু হায়! মেয়েটা শুধুমাত্র আমাকে একটা প্রশ্ন করে। তাতেই আমার হৃদয় ভেঙ্গে শাহরুখ খান সরি খান খান হয়ে যায়। প্রশ্নটা ছিল, আপনি জানেন কি, এটা আমার শ্বশুর বাড়ি ? আমি নিচতলায় শ্বশুর শাশ্বড়িসহ স্বামীর সাথে থাকি!
যেদিনের ঘটনা এটি সেদিনটা ছিল এই নতুন বাসায় উঠার আমাদের ৩১-তম দিন!
Indrajit i

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thanks.