cartoon- indrajit emon |
অনামিকা মন্ডল
বছরতো প্রায় শেষের দিকে। গতকাল আমাকে একজন জিজ্ঞেস করলো, "এই বছরটা তোমার কেমন গেল?"। কি উত্তর দেব ভাবছিলাম কেননা আমি নিজেই কনফিউস্ড! শুনেছি শেষ ভাল যার সব ভাল তার সুতরাং আমার বছরের শেষটা কেমন গেল সেটাই বিবেচ্য বিষয়। এই মাসে একটা ঘটনা ঘটেছে যেটা ভাল না মন্দ বুঝতে পারছিনা!
আমার ইউনিভার্সিটিতে আমার একটা গ্রুপ আছে, সেই গ্রুপের কয়েকজন খুব পরিশ্রমী এবং মনোযোগী পড়াশুনার প্রতি আর কয়েকজন পুরা ডিজিটাল। আমি কোন ক্যাটাগরিতে পরি সেটা একটু পরেই বোঝা যাবে। বছরের মাঝামাঝিতে আমারা একটা নতুন সেমিস্টারে উঠেছিলাম। প্রথম ক্লাসেই ক্লাস রূটিন যথারীতি নোটিস বোর্ডে দিয়ে দিয়েছিল। জ্যোতির মোবাইলের রেজুলেশন ভাল বোলে ্ওকে রূটিনটার একটা পিকচার তুলতে বোললাম। ও পিকচার তুলে আমাদের সবার মোবাইলে ব্লূটুথ করে দিয়ে দিল এবং সাথে সাথে ফেসবুকে ও আপলোড করে দিল। সুতরাং খাতায় লেখার প্রয়োজনীয়তা ছিল বলে মনে হয় নি। শুধুমাত্র রুটিনই না প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ নোটিশই মোবাইলে সংগ্রহ করতাম।
গতমাসে সেমিস্টার ফাইনালের exam রুটিন দিয়ে দেয়। এইবার রুটিন সংগ্রহ করলাম ভিন্নভাবে। ফরিদকে বললাম,
--- তোর মোবাইলের ব্লুটুথ অপশনটাতো নস্ট, তুই ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে রুটিনটা লিখে আমাকে সেন্ট কর।
ও সেন্ট করে দিল। ঐ মাসেই পরীক্ষা শুরু হলো। পুরো সেমিস্টারের ভর্তূকি পরীক্ষার আগে পূরণ করার চেস্টা করতে হয় বলে প্রচুর ব্যস্ত থাকতে হয়। নাওয়া- খাওয়ার ও টাইম পাইনা পরীক্ষার আগে, আর ডিজিটাল চিন্তা ভাবনা গুলো প্যাক করে export করে দেই। যাই হোক ১৩ ই ডিসেম্বর একটা পরীক্ষা ছিল, পরীক্ষা দিয়েই সোজা বাসায় চলে আসি। ফ্রেইন্ডস দের সাথে আড্ডা দের্য়াও মুড ছিলনা কারণ ১৪ তারিখেই আরেকটা exam! শেষ exam ছিল ওটা।
বাসায় এসেই ধুম ধারাক্কা পড়া শুরু করে দেই আর আফসোস করতে থাকি যে কেন আগে থেকে পড়ে রাখলাম না। যে করেই হোক লাস্ট পরীক্ষাটা খুব ভাল দিতে হবে এটাই লক্ষ্য।
পরদিন ভার্সিটির বাসে করে তারাতারি ক্যাম্পাসে গিয়ে নিরিবিলি একটা জায়গা খুজেঁ নিয়ে পড়া শুরু করে দেই।
পরীক্ষা শুরু হবার আধ ঘন্টা আগে ডিপার্টমেন্টে আসি। এসেতো অবাক, ডিপার্টমেন্টে আমাদের ব্যাচের কোন স্টুডেন্টই নেই! কিছুক্ষন পর দেখলাম ফরিদকে, দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সারা রাত জেগে পড়েছে। ফরিদ্ও অবাক কাউকে না দেখে! সাথে সাথে হাদীকে কল দিলাম মোবাইলে। জিজ্ঞেস করলাম,
---তুই কই?।
ও বলল,
---মাত্র ঘুম থেকে উঠেছি, এই পরীক্ষার আগে অনেকদিন বন্ধ পেলাম। হেলে দুলে পরীক্ষাটা দেয়া যাবে।
আমি কথা না বাড়িয়ে ফোনটা কেটে দিলাম এবং নোটিশবোর্ডের কাছে এলাম। দেখলাম পরীক্ষার তারিখ ১৮ই ডিসেম্বর। বিষয়টা তখন অল ক্লিয়ার শ্যাম্পুর মতই ক্লিয়ার। নোটিশটা ইংরেজীতে ছিল, ফরিদ ভুল করে ১৮ কে ১৪ লিখে ফেলেছিল! এমন রাগ উঠেছিল ্ওর উপরে, ইচ্ছে করছিল ্ও কে ফটোকপি ম্যাশিনের ভেতর ঢুকিয়ে ওর কয়টা পোস্টার বানিয়ে দেয়ালে টানিয়ে দেই! তারর্পেও ্ও কে একটা ধন্যবাদ দিলাম কারণ ভাগ্যিস ও ১৮ তারিখকে ১৪ তারিখ লিখেছিল, যদি ১৪ তারিখকে ১৮ তারিখ লিখতো তাহলে কি হত!
ফরিদতো পুরা বোকা হয়ে গেল। বিভিন্ন ধরনের যুক্তি দেখাতে লাগল, যে আমরা অনেক এগিয়ে গেলাম, লাস্ট পরীক্ষাটায় ফাটিয়ে দেবো ইত্যাদি ইত্যাদি।
অবশেষে নির্ধারিত তারিখেই পরীক্ষাটা হল। খুব ভাল হয়েছিল পরীক্ষাটা, এর জন্য ফরিদের সেই ভূলটাই পজিটিভলি দায়ী। শেষ ভাল যার সব ভাল তার প্রবাদটি একটি সুপ্রতিষ্ঠিত প্রবাদ। আর আমার শেষ পরীক্ষাটা খুব ভাল হয়েছে সুতরাং কি করে বলি যে বছরটা আমার খারাপ গেল!
anamika.aana92@yahoo.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thanks.