চোরের দশ দিন আর গৃহস্থের এক দিন!
অনামিকা মন্ডল
আমার ফ্রেইন্ডস গ্রুপের মধ্যে একজনকে আমরা ইদানীং ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদ বলে সম্বোধন করছি.. .., তবে এই খেতাবটা দিয়ে ওকে মান নাকি অপমান দিলাম, সেটা বিবেচ্য বিষয়! রাজনীতিবিদ হবার সকল গুনাগুন ওর মধ্যে বিদ্যমান। ও রাজনীতিবিদদের মত অলওয়েজ একগুয়ে মানে সবসময় নিজের লাইনে চলে, অন্য কারো ভালো উপদেশ কানে নেয়ার মত সময় এবং ইচ্ছা কোনটাই ওর নেই। তবে চান্স পেলে অন্যদের উপদেশ গেলাতে চরম পারদর্শী ও। আর সবচেয়ে ইফেকটিভ যে গুনটা ওর আছে সেটা হলো অন্যকে বোকা বানাবো বা চালাকি করার অস্বাভাবিক ক্ষমতা! এই যেমন আমাদের গ্রুপটাতে একটা নিয়ম আছে যে, যেদিন যার বার্থডে থাকবে সেদিন সেই জন গ্রুপের অন্যান্যদের খাওয়াবে। গ্রুপের সবাই আমরা সেই নিয়ম মেনে নিজ নিজ বার্থডেতে মোটামুটি বড় অংকের টাকা জলাঞ্জলী দিতাম। কিন্তু আমার সেই বন্ধু আসিফ তার বার্থডেটা অতিমানবীয় ব্রেইন খাটিয়ে সফলতার সাথে লুকিয়ে রাখত! একাজে ও ফেসবুকটাকে ইউজ করত! গ্রুপের ১০ জনের বার্থডে মনে রাখা খুবই কস্টকর তাই এই মনে করানোর দ্বায়িত্বটা ফেসবুকের ঘাড়েই দিয়ে দিয়েছিলাম। অর্থাৎ বার্থডে এর দিন ফেসবুক তার চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী মনে করিয়ে দিত কিন্তু কখনোই আসিফের বার্থডে মনে করতে পারেনি ফেসবুক! কারন যতবার আসিফের বার্থডেট ঘনিয়ে আসত ততবার ও সেটা চেইন্জ করে পিছনে নিয়ে যেত! সুতরাং বার্থডে পার্টির খরচটা বেচেঁ যেত ওর। এটাতো জাস্ট একটা নমুনা মাত্র, এভাবেই দিনের পর দিন নিজেকে সেইভ করে চলতে চলতে ও ক্রমাগত অস্পর্সনীয় সম্পদে পরিনত হচ্ছে অর্থাৎ ভবিষ্যৎ মন্ত্রী!
যাইহোক এইতো কয়েকদিন আগের একটা চাঞ্চল্যকর কাহানী ঘটাল আসিফ! সেদিন আমরা ফ্রেইন্ডসরা আমাদের ডিপার্টমেন্টের সেমিনারে বসে পড়ছিলাম। তবে সবাই একসাথে বসে নয়, যে যার সুবিধামত ২-৩ জন করে বসে সিরিয়াস পড়াশুনা চালাচ্ছিলাম। আসিফ আর ফরিদ একত্রে বসে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করতেছিল, আর একটু দুরে আমি, মুনিয়া এবং হাদী রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে প্যাচাল পারতেছিলাম যদিও সামনে একাউন্টিং বইটা খোলা ছিল। এর মধ্যে হঠাৎ আসিফ এলো, পকেট থেকে এক বান্ডেল টাকার একটুখানি বের করে আতঙ্কিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল," ইয়ার, তোদের কারো টাকা কি হারাইছে? আমি একটু আগে টেবিলের ড্রয়ার খুলে এটা পেলাম!" আমরা তো পুরা থ! ফরিদের দিকে তাকিয়ে দেখি বেচারা কেমন যেন নারভাস ফিল করতাছে! সেমিনারে তখন অনেকেই আছে, সবাই যে যার মত পড়াশুনা করছে। কিছুক্ষনের নীরবতা ভেঙে আমি বললাম," কিরে ইয়ার, রেলমন্ত্রীর এপিএস কি তোর কোন আত্মীয় স্বজন? তোরে কি টাকার ভাগ দিল নাকি!" আমার কথা শেষ না করতেই আসিফ বলল,"আমি এই টাকা দিয়া ল্যাপটপ কিনমু! আজ তোদের খাওয়ামু!" ইত্যাদি ইত্যাদি। বোঝাই যাচ্ছিল চরম মুডে আছে টাকাগুলো পেয়ে! এদিকে হাদী প্রথমে টাকাগুলো সেমিনার স্যারের কাছে জমা দিতে বলল তারপর ভাবল স্যার যদি টাকাগুলো মেরে দেয়! তাই কিছু কাগজে টাকা হারানো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেয়ালে টানিয়ে দিতে বলল! কে শোনে কার কথা, আসিফ তার নিজ সিদ্ধান্তে অটল! আমাদের দেশের রাজনীতিবিদেরা যেমন সহজে পদত্যাগ করতে চান না তেমনি আসিফ এই সব টাকা পয়সার ব্যাপারে কোন রকম ছাড় দিতে নারাজ! বার বার ফরিদকে প্ররোচিত করতে লাগল ওর সাথে ব্যাংকে যাবার জন্যে, টাকাগুলো ও ব্যাংকে রেখে দিতে চাচ্ছে! মুনিয়া বোঝাল যে টাকাগুলো যার হারিয়েছে সে তো অনেক টেনশনে আছে! আসিফের পাল্টা জবাব, যদি ওর টাকা হারানো যেত তাহলেতো কেউ তা ফিরিয়ে দিত না তাহলে ও কেন দিবে! যুক্তি অকাট্য তাই আমরা চুপ হয়ে গেলাম। সবাই ওর উপর ক্ষেপে ছিলাম, রাগে ওর সাথে কেউ কথা বলছিলাম না। এরকম সময় হঠাৎ হাদীর ফোন বেজে উঠল, একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এল। কিছুক্ষন কথা বলার পর ফোনটা রেখেই আসিফকে জিজ্ঞেস করলো যে ওর মোবাইল কই! আসিফ সাথে সাথে ওর পকেট থেকে শুরু করে ব্যাগ-ট্যাগ খুজতে লাগল, বাট পেলনা। মোবাইলে কল দিয়ে দেখা গেল মোবাইল সুইচড অফ! আসল কাহিনী অন্যখানে, একটু আগে হাদীর মোবাইলে আন্টি (আসিফের আম্মু) কল করেছিলেন। তিনি হাদীকে যা যা বললেন তা অনেকটা এরকম," বাবা, আসিফ কোথায়? ওর ফোন অফ কেন? আজ সকালে ওর খালার কাছ থেকে অনেকগুলো টাকা নিয়ে বাসায় ফেরার কথা। তবে ফেরার পথে নাকি ক্লাস করে ফিরবে। কিন্তু ওর ফোনটা অফ দেখে টেনশন লাগছে.. .. "। আন্টিকে আশ্বস্ত করলো হাদী এটা বলে যে, এখন পর্যন্ত আসিফ ভালই আছে।
আমাদের এভাবে বোকা বানানোর শাস্তিস্বরূপ অনেককিছুই করতে পারতাম ওর কিন্তু কিছুই করিনি, কারন বেচারা অলরেডী শাস্তি পেয়ে গেছে। গত মাসে কেনা নতুন দামী মোবাইল সেটটা আজ আর নাই! মনে হয় ক্যাম্পাসে আসার পথে ওটার মালিকানা চেইন্জ হয়ে গেছে অর্থাৎ পিক পকেট! একেই বুঝি বলে চোরের দশ দিন আর গৃহস্থের এক দিন!
যাইহোক এইতো কয়েকদিন আগের একটা চাঞ্চল্যকর কাহানী ঘটাল আসিফ! সেদিন আমরা ফ্রেইন্ডসরা আমাদের ডিপার্টমেন্টের সেমিনারে বসে পড়ছিলাম। তবে সবাই একসাথে বসে নয়, যে যার সুবিধামত ২-৩ জন করে বসে সিরিয়াস পড়াশুনা চালাচ্ছিলাম। আসিফ আর ফরিদ একত্রে বসে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করতেছিল, আর একটু দুরে আমি, মুনিয়া এবং হাদী রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে প্যাচাল পারতেছিলাম যদিও সামনে একাউন্টিং বইটা খোলা ছিল। এর মধ্যে হঠাৎ আসিফ এলো, পকেট থেকে এক বান্ডেল টাকার একটুখানি বের করে আতঙ্কিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল," ইয়ার, তোদের কারো টাকা কি হারাইছে? আমি একটু আগে টেবিলের ড্রয়ার খুলে এটা পেলাম!" আমরা তো পুরা থ! ফরিদের দিকে তাকিয়ে দেখি বেচারা কেমন যেন নারভাস ফিল করতাছে! সেমিনারে তখন অনেকেই আছে, সবাই যে যার মত পড়াশুনা করছে। কিছুক্ষনের নীরবতা ভেঙে আমি বললাম," কিরে ইয়ার, রেলমন্ত্রীর এপিএস কি তোর কোন আত্মীয় স্বজন? তোরে কি টাকার ভাগ দিল নাকি!" আমার কথা শেষ না করতেই আসিফ বলল,"আমি এই টাকা দিয়া ল্যাপটপ কিনমু! আজ তোদের খাওয়ামু!" ইত্যাদি ইত্যাদি। বোঝাই যাচ্ছিল চরম মুডে আছে টাকাগুলো পেয়ে! এদিকে হাদী প্রথমে টাকাগুলো সেমিনার স্যারের কাছে জমা দিতে বলল তারপর ভাবল স্যার যদি টাকাগুলো মেরে দেয়! তাই কিছু কাগজে টাকা হারানো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেয়ালে টানিয়ে দিতে বলল! কে শোনে কার কথা, আসিফ তার নিজ সিদ্ধান্তে অটল! আমাদের দেশের রাজনীতিবিদেরা যেমন সহজে পদত্যাগ করতে চান না তেমনি আসিফ এই সব টাকা পয়সার ব্যাপারে কোন রকম ছাড় দিতে নারাজ! বার বার ফরিদকে প্ররোচিত করতে লাগল ওর সাথে ব্যাংকে যাবার জন্যে, টাকাগুলো ও ব্যাংকে রেখে দিতে চাচ্ছে! মুনিয়া বোঝাল যে টাকাগুলো যার হারিয়েছে সে তো অনেক টেনশনে আছে! আসিফের পাল্টা জবাব, যদি ওর টাকা হারানো যেত তাহলেতো কেউ তা ফিরিয়ে দিত না তাহলে ও কেন দিবে! যুক্তি অকাট্য তাই আমরা চুপ হয়ে গেলাম। সবাই ওর উপর ক্ষেপে ছিলাম, রাগে ওর সাথে কেউ কথা বলছিলাম না। এরকম সময় হঠাৎ হাদীর ফোন বেজে উঠল, একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এল। কিছুক্ষন কথা বলার পর ফোনটা রেখেই আসিফকে জিজ্ঞেস করলো যে ওর মোবাইল কই! আসিফ সাথে সাথে ওর পকেট থেকে শুরু করে ব্যাগ-ট্যাগ খুজতে লাগল, বাট পেলনা। মোবাইলে কল দিয়ে দেখা গেল মোবাইল সুইচড অফ! আসল কাহিনী অন্যখানে, একটু আগে হাদীর মোবাইলে আন্টি (আসিফের আম্মু) কল করেছিলেন। তিনি হাদীকে যা যা বললেন তা অনেকটা এরকম," বাবা, আসিফ কোথায়? ওর ফোন অফ কেন? আজ সকালে ওর খালার কাছ থেকে অনেকগুলো টাকা নিয়ে বাসায় ফেরার কথা। তবে ফেরার পথে নাকি ক্লাস করে ফিরবে। কিন্তু ওর ফোনটা অফ দেখে টেনশন লাগছে.. .. "। আন্টিকে আশ্বস্ত করলো হাদী এটা বলে যে, এখন পর্যন্ত আসিফ ভালই আছে।
আমাদের এভাবে বোকা বানানোর শাস্তিস্বরূপ অনেককিছুই করতে পারতাম ওর কিন্তু কিছুই করিনি, কারন বেচারা অলরেডী শাস্তি পেয়ে গেছে। গত মাসে কেনা নতুন দামী মোবাইল সেটটা আজ আর নাই! মনে হয় ক্যাম্পাসে আসার পথে ওটার মালিকানা চেইন্জ হয়ে গেছে অর্থাৎ পিক পকেট! একেই বুঝি বলে চোরের দশ দিন আর গৃহস্থের এক দিন!
well
উত্তরমুছুন